ভালোবাসার দুই প্রান্ত

ভালোবাসার দুই প্রান্ত
Image result for Two ends of love
"স্যান্ডেলের বারি খেয়েছেন কখন??? "
"জ্বি, আপু। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আপনার কথা??"
"মানে আপনি কি কখন ও কারো স্যান্ডেলের বারি খেয়েছেন??মনে ত হয় না খেয়েছেন!"
"না মানে আপু আমাকে কেও কেন ই বা স্যান্ডেলের বারি দিবে??"
"এখন ও ত কেও দেয় নাই।আমি দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি।আপনাকে ইচ্ছা মত কিছু স্যান্ডেলের বারি দিব!! "
"এএ আপু কি বলছেন??কেন দিবেন??আমি কি করেছি??"
"কি করেন নাই সেটা বলেন!এই নরমাল স্যান্ডেলের দাম কখন ও ৩৫০ হতে পারে নাকি??"
"আপু একটু দাড়ান, আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।"
"আরে মিয়া স্যান্ডেলের এত দাম রেখে আবার ভাল সাজা হচ্ছে তাই না?আপ্নারে আইজকাই স্যান্ডেলের বারি দিমু,আমার মাথাটা পুরাই গরম হইয়া গেসে!! "
"আপু ভদ্রভাবে কথা বলুন আমাকে কি ভেবেছেন যে আমি এই দোকানের বিক্রেতা??জ্বি না।আপনি ভুল ভেবেছেন।আমি ও আপনার মত একজন ক্রেতা, বুঝলেন??"
মেয়েটা কিছুক্ষন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল!!তারপর আস্তে আস্তে বলল,
"আপনাকে দেখে ত মনে হয় না যে আপনি ক্রেতা , তাই।সরি মাফ করবেন,বুঝতে পারি নি!"
"বেকার দের এর চেয়ে ভাল পোশাক মানায় না আপু।আচ্ছা, মাফ করে দিবেন।তবে এরপর থেকে একটু সাবধানে কথা বলবেন।"
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেল,মনে হয় আমার সামনে আর থাকতে চাচ্ছে না।আমি ও আর বাধা দিলাম না।
তবে আজব ব্যাপার টা হলো যে সেদিন ই আমার জব এর জন্য ডাক পড়েছিল। না না এম্নিতেই না,অবশ্য ই আমার মামা চাচা ছিল। তবে বর্তমান বাংলাদেশে এমন অবস্তা যে মামা চাচা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই চাকরি হয় না।সেদিক দিয়ে আমার ভাগ্য সিকে ছেড়েছিল, তবে একটু দেরীতে।
অই ঘটনার পর অনেকদিন আর মেয়েটার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় নি।আসলে দেখা হওয়ার কথা ও ত ছিলো না,একটা অজানা অচেনা ছেলের সাথে কোন মেয়ের ঘাড়ে ভূত চাপলেও দেখা হবার কথা নয়৷ কিন্ত কাকতালীয় বলে ত একটা ব্যাপার আছে,আমি এই বিষয়টাতে বেশ বিশ্বাস করতাম। সত্য বলতে অই ঘটনার পর খুব করে চাইতাম যেন আবার দেখা হয় তার সাথে, কোন কারন ছাড়াই কেন জানি মেয়েটা একটা গা ঢ় দাগ ফেলেছিলো মনে!!
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো আমি আর ২য় বার অই জুতার দোকানে যাই নি,কেন জানি মনে হতো যে দোকান টা তে গেলেই খারাপ কিছু ঘটবে। যদিও ব্যাপার টা হাস্যকর, কিন্ত আমার এটাই বারবার মনে হতো, তাই আর সাহস করে সেই দোকানে আর যাওয়া হয় নি আমার ।
কিন্ত ভাগ্য যে বরাবর ই আমার বিপক্ষে থাকে সেটা আমার ছোটবোন আবার প্রমান করে দিলো।কিভাবে কিভাবে জানি অই দোকান টাতেই আবার ছোটবোন সমেত চলে গেলাম,,,
তো যাইহোক যাওয়ার পর যে অই মেয়েটাকেই যে আবার দেখতে পাবো সেটা আমার কাছে কেন জানি অস্বাভাবিক লাগেনি।উলটো ভয় হতে লাগলো,কারন আমার মন সবসময় বলতো এই দোকানে আবার আসলেই খারাপ কিছু হবে,,আরে এই মেয়েকে দেখা হয়তো আবার খারাপ কিছু শুরু হবার প্রথম ধাপ!!!!
"আপনি বই পড়েন?" কথাটা শুনে কিছুটা শক খেলাম। ছোটবোন কে নিয়ে তড়িঘড়ি করে দোকান থেকে বের হচ্ছিলাম আর হুট করে মেয়েটা এই প্রশ্ন টা জিজ্ঞেস করে বসলো।
,মুখে হালকা একটা মুচকি হাসি এনে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোধক উত্তর দিলাম।।
সাথেই সাথেই মেয়েটা বলে উঠলো,
"কাল একবার বাংলা একাডেমীর বইমেলাতে আসবেন। অই যে ফুচকাশপ থাকে না কিছু সেখানে দাড়াবেন। আমার ফুচকা খেতে ভাল লাগে তো!! ও হ্যা,,বিকাল ৫ টা করে আসবেন!"
আমি ত পুরো হতভম্ব হয়ে গেলাম হুটহাট এত কথা শুনে। বোকার মত আরেকটা ফোকলা দাতের হাসি দিয়ে ছোটবোন কে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম। সত্য বলতে কোনকালেই আমি মেয়েদের সাথে স্বাভাবিক ছিলাম না,,আর এই মেয়ে ত!!!!!!
বাসায় এসেই বোন ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাসায় মাইক বাজিয়ে জানান দিলো যে আমি প্রেম নামক এক বড় গর্তে পড়ে গেছি!!! যদিও বাবা মা ব্যাপার টা ভাল চোখে দেখলেন না খারাপ চোখে সেবিষয়ে কোন ধারনাই আমার ছিল না,,,আমি শুধু নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিলাম যে খারাপ কিছু একটা ঘটবে। সেই ঘটনা টা কি, সেটা ভাবতে ভাবতেই আমার পুরো রাত টাই নির্ঘুম কেটে গেলো!!
আসলে আমরা মানুষ টেলিপ্যাথিতে তে তেমন একটা বিশ্বাস করি না,কিন্ত আমাদের মনেই যে একেক্টা করে টেলিপ্যাথ থাকে সেটাই আমরা ভুলে যাই। পরেরদিন টাইমমতো আমি ফুচকা শপে উপস্থিত থাকলে ও মেয়েটা আসে নি। শুধু সেদিন না বইমেলার বাকী কোন দিন ই মেয়েটি আসে নি। কারন কি, কোন দুর্ঘটনা ঘটলো কিনা,,এসব কিছুই জানি না আমি৷মজার ব্যাপার আমি মেয়েটার নাম উব্দি জানতাম না,,কিন্ত বুঝতে পেরেছিলাম মনের একটা বিরাট অংশ এই মেয়েটা দখল করে ফেলেছে!!
"ভালোবাসা " কি আমি জানি না,,কিন্ত ভালোবাসার অপেক্ষা যে কতটা ভয়ানক কষ্টের হয় সেটা আমি জানি। সেই ঘটনার পর আমি প্রতিবছর ই বাংলা একাডেমির বইমেলাতে যেতাম,,হয়তো ১/২ টা বই ও কিনতাম। কিন্ত বেশি যে কাজ টা করতাম তা হলো হাটা,,বইমেলার প্রতিটা স্টল ঘুরে ঘুরে হাটা টাই যেন এক প্রকার নেশা হয়ে গিয়েছিলো আমার। হয়তো আনমনে সেই নাম না জানা ঝাঝালো কন্ঠের মেয়েটাকে খোজাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল,কিন্ত সেটা আমি মন কে কোনভাবেই বুঝতে দিতাম না। কে জানি বলেছিলো "মন কে বোকা বানিয়ে রাখ রে পাগলা,জীবন এর অনেক কিছু বুঝতে পারবি!"
আমি এখনো সেই কাজ টাই করি, মন কে বোকা বানিয়েই রাখি,এমন কি গতবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি তে যখন মেয়েটা কে তার হাসবেন্ড সমেত একটা স্টলের সামনে হাটতে দেখেছিলাম সেদিন ও মন টা কে বোকা বানিয়েই রেখেছিলাম।
সময় থমকে যাওয়া মত ঘটনা আমার জীবনে শুধুমাত্র একবার ই ঘটেছিল,যখন মেয়েটা আর আমার চোখাচোখি হয়েছিলো। এক দৃ ষ্টিতে কতক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়্র ছিলাম সেটা হয়তো পরিমাপ করার ভাগ্য আমার হয় নি, কিন্ত মেয়েটার হাসবেন্ড এর সাথে পরিচয় হবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো।ভদ্রলোকের মুখেই সেদিন প্রথম জানতে পেরেছিলাম যে মেয়েটার নাম প্রিয়তা। তবে প্রিয়তা আমাকে তার কলেক ফ্রেন্ড হিসেবেই পরিচয় দিয়েছিলো স্বামীর কাছে।
স্বামী হিসাবে মানুষ টা কে আমার বেশ ভাল ই লেগেছিল,,সদা হাস্যমুখী যে লোক তার জীবন এ জায়গা পাওয়াটা ভাগ্যর ব্যাপার। আর যারা বই ভালোবাসে তাদের খারাপ দিক থাকার সম্ভাবনাটাও খুব কম।তবে একদিনের পরিচয়ে আমি লোক টার একটা ও খারাপ দিক বের করতে পারিনি। পরিশেষে শুধু মনে হয়েছিলো প্রিয়তা ভালো হাতের কাছেই গচ্ছিতো আছে।
এতকিছুর পরেও আমি আমার বইমেলাতে হাটার নেশাটাকে ছাড়তে পারিনি,,, হাটাটাই যেন একমাত্র নেশা আর পেশা হয়েগেছে আমার জীবনে, কারন আমার যে হাটতে ভাল লাগে।


জয় চন্দ্র রায়

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.