অবলা
অবলা
যে মেয়েটা কলেজ-ভার্সিটির জাতীয় ক্রাশ বলে পরিচিত ছিল সেই মেয়েকেও শ্বশুরবাড়ি গিয়ে শুনতে হবে,
-নাক মোটা, চোখ পিতিপিতি।
পাশের বাড়ির চাচীশ্বাশুড়ি ফিসফিস করে বলবে,
-বউর পায়ের গোড়ালি সরু, বাঁশের কঞ্চির মত।
জ্বী হ্যা। আপনি যদি ভাবেন আপনার ফর্সা রঙ আর লম্বাগড়নের বদৌলতে ছাড় পাবেন তাহলে ডাহা মিথ্যা। ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব আমরা কেউই নিঁখুত নই। আপনার চোখে কিছু স্বাভাবিক অন্যের চোখে তা বক্র হয়ে ধরা দিবে।
কন্যা সন্তান জন্ম নেবার পর তার হাত-পা, পাঁচটা পরিপূর্ণ অাছে কি না তা যাচাই করার আগে দেখা হয়,
-কন্যা ফর্সা না কালো!
ঘোমটা পরিহিত বয়স্কা মহিলা মন্তব্য করবে,
-কান দুইখানা কালো।বড় হলে কালোই হবে বড়জোড় শ্যামলা।
-কন্যা ফর্সা না কালো!
ঘোমটা পরিহিত বয়স্কা মহিলা মন্তব্য করবে,
-কান দুইখানা কালো।বড় হলে কালোই হবে বড়জোড় শ্যামলা।
ছেলে নিগ্রোদের মত কুচকুচে কালো রঙ নিয়ে জন্ম নিক, বলা হবে
-সোনার আঙটি বাঁকাও ভালো।
-সোনার আঙটি বাঁকাও ভালো।
এদেশে আমরা যাকে বর্ণবৈষম্য বলে সংজ্ঞায়িত করি তা আসলে লিঙ্গবৈষম্যের একটা দিক।
এলাকার সবচেয়ে কালো মেয়েটিও বছরে দু'চারটা লাভ লেটার পায়। একজন প্রেমিক ঠোঁটের কোণায় হাসি খেলিয়ে বলবে,
-তুমি কালো তাই আমার কৃষ্ণকলি।
পাত্রী দেখে আসার পর কোনো ছেলেকে প্রশ্ন করুন,
-মেয়ে দেখতে কেমন?
-ভালোই।
খুব বেশি সুন্দরী না হলে উত্তর দিবে,
-আছে। মোটামুটি।
-মেয়ে দেখতে কেমন?
-ভালোই।
খুব বেশি সুন্দরী না হলে উত্তর দিবে,
-আছে। মোটামুটি।
ঠিক একই প্রশ্ন আপনি ছেলের আত্মীয়া করে দেখুন,
-ফর্সা খারাপ না তবে নাকের ছিদ্র বড় বড়।
চেহারায় মায়া নাই।
ভাবী দেখছেন,
-মেয়ের গলার চেয়ে মুখ কত ফর্সা। যে যুগ পড়ছে কালো মাইয়া কি আর কালো থাকে।
-ফর্সা খারাপ না তবে নাকের ছিদ্র বড় বড়।
চেহারায় মায়া নাই।
ভাবী দেখছেন,
-মেয়ের গলার চেয়ে মুখ কত ফর্সা। যে যুগ পড়ছে কালো মাইয়া কি আর কালো থাকে।
আমরা কথায় কথায় পুরুষশাসিত সমাজের দোষারোপ করি।একজন নারী তার জীবনে সবচেয়ে বেশি অপমানিত হয় ঠিক তারমতই একজন নারীর কাছ থেকে।মাছের মাথাটা পুত্রের প্লেটে তুলে দিয়ে মা মেয়ের মাথায় হাত দেয়,
-থাক মা,তুমি কালকে খেও।
বড়বোনকে কিলঘুষি দেবার পর ছোটভাই মায়ের প্রশয়ের হাসি দেখে,
-রাগ করিস না, মা।ছেলেরা একটু দুষ্টই হয়।
স্বামীর কাছে আহ্লাদি কৃষ্ণকলি হলেও শ্বশুরবাড়ির লোক বলবে,
-বউ আনছে শ্মশানকালী।
-বউ আনছে শ্মশানকালী।
৩.৭৫ সিজিপিএ মিথ্যা এখানে পেঁয়াজ কাটা কতটা সূক্ষ্ম হল তা দিয়ে গুণের কদর করা হবে।
মঞ্চ কাঁপিয়ে বক্তৃতা দিতে পারেন সেসব ভুলে গিয়ে মনে রাখতে হবে,
-বাড়ির বউর গলার স্বর উচুঁতে উঠতে নেই।
মঞ্চ কাঁপিয়ে বক্তৃতা দিতে পারেন সেসব ভুলে গিয়ে মনে রাখতে হবে,
-বাড়ির বউর গলার স্বর উচুঁতে উঠতে নেই।
ভালো নাচতে জানেন, রবীন্দ্র সংগীতে সিদ্ধহস্ত, বাগ্নী তাতে কি! বউ রাঁধতে জানে না তারমানে সে পৃথিবী জানে না। যে মেয়েটার সঞ্চিতা মুখস্থ সে একদিন কয়েল জ্বালাতে ভুলে গেলে শুনতে হবে,
-বুড়ি বউ আনছি, ভুলোমনা।
-বুড়ি বউ আনছি, ভুলোমনা।
জবরজং গয়না, ভারী শাড়িতে লোকজনকে শোঅফ করা হবে,
-বউ কত সুখে আছে।
-বউ কত সুখে আছে।
টিকালো নাক, ফর্সা রঙ, চাপা ফুলের মত গোটা গোটা আঙুল দেখে বউ আনা হয়। দশ বছর পর কেউ খবর রাখে না,
-ফর্সা রঙ ময়লা,টিকালো নাক চুলার আঁচে টকটকে লাল। চাপা আঙুল বটির দাগে ছ্যাচড়ে গেছে।বিয়ের শাড়ি আলমারিতে বছরের পর বছর সযত্নে গোছানো থাকে, শাড়ির মানুষটার ঘুণ ধরে যায়।
-ফর্সা রঙ ময়লা,টিকালো নাক চুলার আঁচে টকটকে লাল। চাপা আঙুল বটির দাগে ছ্যাচড়ে গেছে।বিয়ের শাড়ি আলমারিতে বছরের পর বছর সযত্নে গোছানো থাকে, শাড়ির মানুষটার ঘুণ ধরে যায়।
নাকফুল, দু'গাছি চুড়ি সকালসন্ধ্যা মনে করিয়ে দেয়,
- তুমি সব পারো শুধু নিজের গড়া স্বপ্নগুলি সত্যি করতে পারো না।
- তুমি সব পারো শুধু নিজের গড়া স্বপ্নগুলি সত্যি করতে পারো না।
হাবিবা সরকার হিলা
কোন মন্তব্য নেই