অন্তর্মূখী

অন্তর্মূখী


Image result for অন্তর্মূখী
"আড়ালে থাকা মানুষগুলোকে আমরা সবসময় আড়ালেই রেখে দেই"
তাদেরকে না জেনেই আমরা তাদের নামের পাশে জুড়ে দেই কিছু অযৌক্তিক খেতাব!
এতো সময় কই অন্যকে জানার! ক্লাসের চুপচাপ বসে থাকা ছেলেটি/ মেয়েটি চুপচাপই থেকে যায়! কারো ইচ্ছে হয়না তাদের সাথে বসতে, দুদন্ড কথা বলতে! আড্ডার আসরে জানতে চাওয়া হয়না তাদের মতামত। ছেলেটি / মেয়েটি তার গুরুত্বহীনতা বুঝতে পারে, তাইতো তুমুল আড্ডার মাঝে তার মনে উঁকি দেওয়া কথাটি সে বলবে কি বলবে না সেই দ্বিধায় ভুগতে ভুগতে আড্ডা শেষ হয়ে যায়। চুপচাপ শান্তশিষ্ট মেয়েটা নিঃসন্দেহে সংসারী।এরকম মেয়েই বিয়ের জন্য উপযুক্ত। আড্ডার আসরে সেলেব্রেটি না হতে পারা ছেলেটা ওর আবার মতামত কিসের? ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকা মেয়েটি , উফ বিরক্তিকর! সাদামাটা চালচলেনের মানুষটি যার কাছে সাজগোজ বেশভূষা বাহ্যিক বিষয়গুলো গুরুত্বহীন, সে আধুনিকতার কি বোঝে?
কোন দিন যদি ভুল করে এসব মানুষদের জানতে ইচ্ছে করে, তখন বুঝতে পারবেন এদেরকে জানার শেষ নেই! অনেকটা সময় ধরে জানার পর মনে হবে তাকে আরেকটু জানা প্রয়োজন । আপনি যতই তাকে জানতে পারবেন ততই মুগ্ধতা বাড়তে থাকবে! তারপরেও মনে হবে রহস্যের কিনারা খুজে পেলেন না! অথচ এই পরিচিত মানুষটি এতোদিন আপনার চোখেই পড়ে নি! আড্ডার আসরে সেলেব্রেটি না হতে পারা ছেলেটাকে কোন একদিন কথা বলার সুজোগ করে দিন, নিঃসন্দেহে ঐ বোকাসোকা ছেলেটার এতোদিনের জমিয়ে রাখা কথা, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনদর্শন আন্তরীক আচরন আপনার মন ছুয়ে যাবে।আপনি যখন আড্ডা শেষে বাসায় ফিরে যাবেন তখনও তার কথাগুলো আপনার কানে বাজতে থাকবে, তাকে নিয়ে তৈরী হবে আপনার মনে বিস্ময় ! ও কে এরকম করে তো কখনো দেখিনি!
ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকা ছেলেটি / মেয়েটি যে আপনাকে কথায় কথায় হাসাতে পারেনা, আপনার সাথে সহজে গালগল্প জুড়ে দিতে পারে না, তার সাথে ভুল করে যদি একদিন কথা বলতে ইচ্ছে হয়, সেদিন জানতে পারবেন ছেলেটি বা মেয়েটি বন্ধু হিসেবে কতটা বিশ্বস্ত।
কিশোরী সংসারী মেয়েটি যে নিঃশব্দে সংসারের পুরো দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছে, যাকে দেখলেই মনে হয় ডাল চালের আলাপ ছাড়া একি অন্য কিছু বুঝবে? কোনদিন তার সাথে তার ইচ্ছের কথা জানতে চান, তার দায়িত্বের আড়লে চাপা পরে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে একটু নাড়িয়ে দিন।বিশ্বাস করেন মেয়েটার নিজস্বতা আপনাকে নতুন করে তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে!
দায়িত্ব মেয়েটির নিজস্বতা আড়াল করে দিয়েছে, শেষ করে দেয়নি, আর সেটি ঠিকই ফাকঁফোকড় দিয়ে বের হয়ে আসবে, যেই স্বপ্নগুলো মেয়েটার চোখে খেলা করে, সেই অধরা স্বপ্নগুলো সে একদিন নিশ্চিত ছুয়ে দিবে।
আড়ালে থাকা মানুষটা যাকে আপনার নির্বোধ মনে হয়, একদিন তার জ্ঞানের পরিধিও হয়ত আপনার জ্ঞানের তুচ্ছতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। চুপচাপ থাকার মানে এই নয় যে সে নির্বোধ!
ভেষভূষায় অনাধুনিক ক্ষ্যাত খেতাব পাওয়া মানুষটার আধুনিকতা থাকে চিন্তায়। সে জিবনরহস্য জানতে চায়, মানুষকে জানতে চায়, তাই আপনি কোন ব্রান্ডের জামা পড়েছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব তার কাছে, আপনি কেমন আছেন? আপনার ঝকঝকে চকচকে চেহারাটি তার চোখে না পড়লেও আপনার আড়াল করতে চাওয়া কষ্টটা তার খুব সহজেই চোখে পড়ে যায়!
এতো অবহেলার পরেও এদের কাউকে নিয়ে অভিযোগ থাকে না, কারন এরা নিজের দুর্বলতা মানতে জানে। introvert স্বভাবের মানুষ নিজেকে তুলে ধরতে পারে না বলে তারা জ্ঞানশূন্য, নির্বোধ এসব খেতাব জুড়ে দিতে হবে কেন? Extrovert স্বভাবের মানুষের হইহুল্লোড় করা, নিজেকে অন্যের সামনে সহজে তুলে ধরতে পারার বিষয়টা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি introvert স্বভাবের মানুষদেরও চুপচাপ থাকা নিজেকে আড়াল করতে চাওয়ার বিষয়টা স্বভাবিক। তাই বলে এটা ভাবার সুজোগ নেই, এরা বোকা, চারপাশ নিয়ে এদের কোন মতামত নেই, অথবা এরা জ্ঞানশূন্য।
introvert মানুষদের নিজেদের একটা জগৎ থাকে। সেখানে সে নিজের সাথে কথা বলে, দ্বন্দ্বে জড়ায়, নিজেকে অকৃত্রিমভাবে ভালবাসে, আবার কখনো নিজের দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে চায়। তার নিজের জন্য তৈরী একটি আশ্রয়স্হল আছে যেটি সে নিজের প্রতি নিজের ভরসা, সান্তনা, বিবেকবোধ আর মানবতাবোধ দিয়ে গড়ে তুলেছে। তাইতো দুনিয়ার এতো অবহেলাও তার বেচেঁ থাকার ইচ্ছাকে ম্লান করতে পারে না।বন্ধুহীনের মাঝেও সে কখনো একাকী হয় না।

অপরাজিতা অতন্দ্রিলা

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.