হত্যা রহস্য
৬০০টি খুন করেছেন এলিজাবেথ বাথোরি!
এখন পর্যন্ত তার খুনের রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। ৫৪ বছরের জীবনে ৬০০ জনকে খুন করেছেন। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম আছে তার। তিনি এতো খুন করেছেন কিন্তু প্রতিটি খুন করার কৌশল ছিল আলাদা। জন্ম হাঙ্গেরীতে ১৫৬০ সালে। মৃত্যু ১৬১৪ সালে। নাম, এলিজাবেথ বাথোরি। নোবেল বিজয়ী হাঙ্গেরিয়ান লেখক ইমরে কার্তেজ তাকে নিয়ে ফিকশন লেখেছেন। তিনি এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ' ৬০০টি খুন করার পেছনে একটি আপেলই যথেষ্ট ছিল।'
তিনি খুনের নেশায় মত্ত হন তাঁর স্বামী ফ্র্যাংক নাডাসডি ১৬০৪ সালে মারা যাওয়ার পর। তবে আগেও খুন করেছিলেন ৪৮টি। কিন্তু বাকি গুলো এরপর। তিনি ভার্জিন নারীদের বাড়ির কাজে নিযুক্ত করতেন খুন করার জন্য। সবগুলো খুন করেন ১৫৮৫ থেকে ১৬০৯ সালের মধ্যে। নারীদের খুন করার ক্ষেত্রে কখনো তিনি ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেন। কখনো ঘুমের মধ্যে গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করতেন। কখনো বাথটাবে স্নানের সময় নামে 'টিনসা' নামের একধরণের জলের পাম্প দিয়ে অতিরিক্ত জল খাইয়ে মারতেন। ফলে কোনো খুনেই প্রমাণিত করা যেত না যে কাথোরি খুন করেছেন। প্রথম খুন করেন বুদাপেস্টে এক মাতালকে গাড়ি চাপা দিয়ে, ১৫৮৫ সালের ডিসেম্বরের বড়দিনে।
তিনি ১৬১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন, ''একটি আপেল কেটে আমি শৈশবে খেয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল আপেলটি কাঁদছে। এরপর টানা ৬দিন আমি ঘুমাতে পারিনি। সিডেটিভ অষুধ ডাক্তার দিয়েছিলেন। পরে বুদাপেস্টের রাস্তায় বড়দিনে চার্চ থেকে যখন ফিরছিলাম তখন গাড়ির সামনে এক মাতাল বারবার বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করছিল। হর্ণ দিলেও সরছিল না। হঠাত্ চোখের সামনে ভাসতে থাকল অসংখ্য আপেল। এরপর আর দেরি না করে লোকটিকে গাড়িচাপা দেই। আফসোস করি না এই ভেবে যে আপেলকে খুন করলে মানুষ খুন করলে অপরাধ কোথায়?
পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ খুনিঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত মার্ডার কেসগুলির মধ্যে একটি জেমস বালগার মার্ডার কেইস। কিছু কিছু ব্যাপার এই কেসটাকে বিচিত্র করে তুলেছিল। খুন হওয়া এই জেমস বালগারের বয়স ছিল মাত্র ২ বছর। এই কেইসে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল খুনীর বয়স। খুনী একজন নয় ছিল দুজন। এবং দুজনের বয়সই ছিল মাত্র দশ বছর। জন ভ্যানিবেলস এবং রবার্ট থম্পসন দুজন মিলে খুন করেছিল জেমস বালগারকে।
জেমস বালগারের জন্ম ১৬ মার্চ ১৯৯০ ইংল্যান্ডের ক্রিকবিতে।রালফ বালগার এবং ডেনিস বালগার দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল জেমস। ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ সালে মাত্র ২ বছর বয়সেই নৃশংসভাবে খুনের শিকার হয় জেমস। ১২ তারিখে মায়ের সাথে শপিং এ গিয়েছিল জেমস।
হঠাত্ করেই জেমসের মা চোখের আড়াল হলেই জন ভ্যানিবেল এবং রবার্ট থম্পসন মিলে জেমসকে ডেকে নিয়ে যায়। ওইদিন থেকেই জেমস নিখোজ ছিল। জেমসের মা জানতেনও না তার ছেলেকে কে নিয়ে গেছে। দুইদিন খোজাখুজি করার পর অবশেষে জেমসের লাশ পাওয়া যায় ৪ কিলোমিটার দূরে এক রেললাইনের পাশে। পুরো শরীরে রক্তে ভেজা। যেন কেউ একজন প্রচন্ডভাবে পাথর দিয়ে পুরো শরীর থেতলে দিয়েছে।
লাশ পাওয়া গেলেও কে বা কারা তাকে খুন করেছে এ ব্যাপারে কোন হদিস তখনো পাওয়া যায়নি। এরও প্রায় চারদিন পর শপিঙ্গমলের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ থেকে দুজন ছেলেকে সন্দেহ করে পুলিশ। এরাই হল থম্পসন এবং ভ্যানিবেলস। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় থম্পসন এবং ভ্যানিবেলসের হাত ধরে জেমস বাল্গার হেটে যাচ্ছে।
২০ ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।দুইদিন পরই তাদের কোর্টে হাজির করা হয়।কোর্ট তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেয়। একজন মনোবিদের উপস্থিতিতে চলতে থাকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ। এর মধ্যে ডিএনএ টেস্টে ভ্যানিবেলস এবং থম্পসনের জুতাতে জেমসের রক্ত পাওয়া যায়।
এদিকে থম্পসন এবং ভ্যানিবেলস দুজনই অপরাধ স্বীকার করে নেয়। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা একে অপরকে দোষারোপ করছিল। কিন্ত শেষ পর্যন্ত সবকিছুই পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয়ে আসে। ভ্যানিবেলস এবং রবার্টসন বেশ কয়েকদিন ধরেই একটা খেলা করে আসছিল। খেলাটা ছিল বেশ অদ্ভুত।
তারা নিজেদের অপরাধী ভাবতে পছন্দ করত। এবং একজন অপরাধী যেধরণের কাজ করতে পারে তারা সেধরণের কাজই খেলাচ্ছলে করত। তারা প্রায়ই স্কুল পালিয়ে এধরণের কাজ করত। প্রথমদিকে তারা দোকান থেকে কিংবা অন্যদের বাসা বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করত। কিন্ত একদিন ওরা ঠিক করে এসব নয়। কাউকে অত্যাচার করে মারতে হবে।
আর সে পরিকল্পনাতেই খুন হয় জেমস। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় থম্পসন এবং ভ্যানিবেলস শপিং মলে চারিদিকে তাকিয়ে টার্গেট ঠিক করছে। একসময় দেখা যায় ভ্যানিবেলসের হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। এসময় কালো জ্যাকেট পড়ে রবার্টসনকে ঠিক সামনে দিয়ে হাটতে দেখা যায়।
এরপর তারা দুজনে মিলে জেমসকে নিয়ে যায় লিভারপুলগামী এক রেললাইনের ধারে। সেখানে পাথর ছুড়ে খুন করে জেমসকে।নিয়ে যাওয়ার পথে জেমস বেশ কাদছিল। পরবর্তীতে ৩৮ জন লোক পাওয়া যায় যারা জেমসকে কাদতে কাদতে থম্পসন এবং ভ্যানিবেলসের সাথে যেতে দেখেছে। কিন্ত কেউই ব্যাপারটাকে পাত্তা দেয়নি। সবাই ভেবেছিল ছোট ভাই তার বড় দুই ভাইয়ের সাথে হেটে যাচ্ছিল।
২৪ নভেম্বর ১৯৯৪ আদালত থম্পসন এবং ভ্যানিবেলসকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এদের দুজনকে আলাদাভাবে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। রায়ে বলা হয় যতদিন পর্যন্ত না তারা প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে ততদিন তাদের মুক্তি দেয়া হবে না। শেষে ২০০০ সালে দুই জনকে নতুন পরিচয়ে মুক্তি দেওয়া হয়।
সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে হত্যা-পরবর্তী দেহ-লোপাটের ঘটনা নিয়ে। খুন করার এটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা। তারই কৌশল উদ্ভাবনে কুখ্যাত হয়েছেন বিলেতের এক নাপিত। সুইনি টড। তাঁর কেলেংকারি হেলায় চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপার-এর কুকীর্তিকে।
সুইনি টড-ও ছিলেন সিরিয়াল কিলার। তিনি নাকি কম করে একশো ষাট জনকে খুন করেন। খুনগুলো প্রায় একই ভাবে হয়েছিল, মৃতদেহ চালান করার ব্যবস্থাটিও ছিল নিখুঁত। প্রায় আড়াইশো বছর আগের কাহিনি। লন্ডনের ফ্লিট স্ট্রিটে ছিল তাঁর সেলুন। বেশ নামডাকও করেছিলেন টড। কিন্তু তাঁর সেলুনে এসে অনেকেই নাকি আর ফেরেনি! হাতের ধারাল ক্ষুরটি টড সরাসরি তাদের গলায় চালিয়ে দিতেন। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসত রক্ত। তার পর টাকাপয়সা, দামি জিনিসপত্র যা থাকত, হাতিয়ে নিতেন। নানাবিধ লিভার আর কলকবজার মাপা হিসেবে খদ্দেরের বসার চেয়ারটিও নিজের হাতে চমৎকার বানিয়েছিলেন টড। চেয়ারের বিশেষ একটা অংশে চাপ দিলেই সেটা পিছন দিকে উলটে যেত। একই সঙ্গে ফাঁক হয়ে যেত চেয়ারের পিছনের অংশের মেঝে। সেই ফাঁক দিয়ে সটান বেসমেন্টে পড়ত তড়পাতে থাকা দেহটি। শেষ প্রাণবায়ুটিও তত ক্ষণে হাওয়া। তার পর?
এ বার হাত লাগাতেন টডের সঙ্গিনী মিসেস লাভেট। তাঁর ছিল একটি পাই-শপ; টডের সেলুন-লাগোয়া। গোপনে মৃতদেহ থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিতেন লাভেট।
সুইনি টডের কাহিনি ধারাবাহিক ভাবে ‘দ্য স্ট্রিং অব পার্লস: আ রোমান্স’ নামে প্রথম ছাপা হয় ‘দ্য পিপল্স পিরিয়োডিক্যাল অ্যান্ড ফ্যামিলি লাইব্রেরি’ পত্রিকায়, ১৮৪৬-৪৭ নাগাদ। তার পরেও অজস্র বার লেখা হয়েছে ‘সুইনি টড: দ্য ডেমন বারবার অব ফ্লিট স্ট্রিট’-এর গল্প। বহু সিনেমা, নাটক, মিউজিক্যাল হয়েছে। অবশ্য সবই ফিকশনের আদলে। সুইনি টডের মিথ এ সব হাড়হিম করা সৃষ্টিকে বারে বারে সুপারহিট করে দিয়েছে। মনস্তত্ত্ব যাকে ব্যাখ্যা করছে, আমাদের অবচেতনে থাকা সবচেয়ে ভয়ংকর ভয় হিসাবে। ২০০৭-এর জনি ডেপ অভিনীত টিম বার্টনের ‘সুইনি টড’-এ যেমন মিট পাই-এর প্রসঙ্গে বলাই হচ্ছে— ‘উই উইল সার্ভ এনি ওয়ান অ্যান্ড টু এনি ওয়ান অ্যাট অল!’
ইতিহাসবিদদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, ‘সুইনি টড’ নেহাতই বানানো গপ্পো, কিংবা, বিভিন্ন সিরিয়াল কিলার ও অপরাধীর কীর্তিকলাপ একজোট হয়ে জন্ম দিয়েছিল এই ভয়াল মিথের। কিন্তু চলতি ধারণার বিপরীতে গিয়ে সুইনি টডকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে, তার খুনখারাবিকে সত্য ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও নৃতত্ত্ববিদ পিটার হ্যাইনিং। গবেষণায় তিনি বলছেন, ১৭৫৬ সালের ২৬ অক্টোবর সুইনি টডের জন্ম। ছেলেবেলা থেকেই বাড়ির অশান্ত পরিবেশ, বাবা-মায়ের খারাপ সম্পর্ক তাঁকে ঠেলে দেয় অপরাধের দিকে। ছোট্ট একটা চুরির দায়ে ১৭৭০ সালে তাঁর জেল হয়। সেখানেই তাঁর ক্ষৌরকর্মে হাতেখড়ি। পাঁচ বছর তিনি জেলের ক্ষৌরকারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। জেল থেকে বেরনোর পর নিজের সেলুন খোলেন ১৮৬ নম্বর ফ্লিট স্ট্রিটে, যার লাগোয়া ছিল একটি পাই-শপ। ক্রমে শুরু হয় সেই ভয়ংকর হত্যালীলা। হ্যাইনিং-এর তথ্য অনুযায়ী, বহু খুন করলেও, দেহ না-মেলায়, মোটে একটি খুনের দায়েই শেষমেশ দোষী সাব্যস্ত হন টড। ওল্ড বেইলি-র আদালতে তাঁর বিচার চলে। ১৮০২-এর ২৫ জানুয়ারি হাজার-হাজার জনতার সামনে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
এখন পর্যন্ত তার খুনের রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। ৫৪ বছরের জীবনে ৬০০ জনকে খুন করেছেন। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম আছে তার। তিনি এতো খুন করেছেন কিন্তু প্রতিটি খুন করার কৌশল ছিল আলাদা। জন্ম হাঙ্গেরীতে ১৫৬০ সালে। মৃত্যু ১৬১৪ সালে। নাম, এলিজাবেথ বাথোরি। নোবেল বিজয়ী হাঙ্গেরিয়ান লেখক ইমরে কার্তেজ তাকে নিয়ে ফিকশন লেখেছেন। তিনি এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ' ৬০০টি খুন করার পেছনে একটি আপেলই যথেষ্ট ছিল।'
তিনি খুনের নেশায় মত্ত হন তাঁর স্বামী ফ্র্যাংক নাডাসডি ১৬০৪ সালে মারা যাওয়ার পর। তবে আগেও খুন করেছিলেন ৪৮টি। কিন্তু বাকি গুলো এরপর। তিনি ভার্জিন নারীদের বাড়ির কাজে নিযুক্ত করতেন খুন করার জন্য। সবগুলো খুন করেন ১৫৮৫ থেকে ১৬০৯ সালের মধ্যে। নারীদের খুন করার ক্ষেত্রে কখনো তিনি ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেন। কখনো ঘুমের মধ্যে গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করতেন। কখনো বাথটাবে স্নানের সময় নামে 'টিনসা' নামের একধরণের জলের পাম্প দিয়ে অতিরিক্ত জল খাইয়ে মারতেন। ফলে কোনো খুনেই প্রমাণিত করা যেত না যে কাথোরি খুন করেছেন। প্রথম খুন করেন বুদাপেস্টে এক মাতালকে গাড়ি চাপা দিয়ে, ১৫৮৫ সালের ডিসেম্বরের বড়দিনে।
তিনি ১৬১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন, ''একটি আপেল কেটে আমি শৈশবে খেয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল আপেলটি কাঁদছে। এরপর টানা ৬দিন আমি ঘুমাতে পারিনি। সিডেটিভ অষুধ ডাক্তার দিয়েছিলেন। পরে বুদাপেস্টের রাস্তায় বড়দিনে চার্চ থেকে যখন ফিরছিলাম তখন গাড়ির সামনে এক মাতাল বারবার বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করছিল। হর্ণ দিলেও সরছিল না। হঠাত্ চোখের সামনে ভাসতে থাকল অসংখ্য আপেল। এরপর আর দেরি না করে লোকটিকে গাড়িচাপা দেই। আফসোস করি না এই ভেবে যে আপেলকে খুন করলে মানুষ খুন করলে অপরাধ কোথায়?
পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ খুনিঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত মার্ডার কেসগুলির মধ্যে একটি জেমস বালগার মার্ডার কেইস। কিছু কিছু ব্যাপার এই কেসটাকে বিচিত্র করে তুলেছিল। খুন হওয়া এই জেমস বালগারের বয়স ছিল মাত্র ২ বছর। এই কেইসে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল খুনীর বয়স। খুনী একজন নয় ছিল দুজন। এবং দুজনের বয়সই ছিল মাত্র দশ বছর। জন ভ্যানিবেলস এবং রবার্ট থম্পসন দুজন মিলে খুন করেছিল জেমস বালগারকে।
জেমস বালগারের জন্ম ১৬ মার্চ ১৯৯০ ইংল্যান্ডের ক্রিকবিতে।রালফ বালগার এবং ডেনিস বালগার দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল জেমস। ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ সালে মাত্র ২ বছর বয়সেই নৃশংসভাবে খুনের শিকার হয় জেমস। ১২ তারিখে মায়ের সাথে শপিং এ গিয়েছিল জেমস।
হঠাত্ করেই জেমসের মা চোখের আড়াল হলেই জন ভ্যানিবেল এবং রবার্ট থম্পসন মিলে জেমসকে ডেকে নিয়ে যায়। ওইদিন থেকেই জেমস নিখোজ ছিল। জেমসের মা জানতেনও না তার ছেলেকে কে নিয়ে গেছে। দুইদিন খোজাখুজি করার পর অবশেষে জেমসের লাশ পাওয়া যায় ৪ কিলোমিটার দূরে এক রেললাইনের পাশে। পুরো শরীরে রক্তে ভেজা। যেন কেউ একজন প্রচন্ডভাবে পাথর দিয়ে পুরো শরীর থেতলে দিয়েছে।
লাশ পাওয়া গেলেও কে বা কারা তাকে খুন করেছে এ ব্যাপারে কোন হদিস তখনো পাওয়া যায়নি। এরও প্রায় চারদিন পর শপিঙ্গমলের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ থেকে দুজন ছেলেকে সন্দেহ করে পুলিশ। এরাই হল থম্পসন এবং ভ্যানিবেলস। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় থম্পসন এবং ভ্যানিবেলসের হাত ধরে জেমস বাল্গার হেটে যাচ্ছে।
২০ ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।দুইদিন পরই তাদের কোর্টে হাজির করা হয়।কোর্ট তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেয়। একজন মনোবিদের উপস্থিতিতে চলতে থাকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ। এর মধ্যে ডিএনএ টেস্টে ভ্যানিবেলস এবং থম্পসনের জুতাতে জেমসের রক্ত পাওয়া যায়।
এদিকে থম্পসন এবং ভ্যানিবেলস দুজনই অপরাধ স্বীকার করে নেয়। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা একে অপরকে দোষারোপ করছিল। কিন্ত শেষ পর্যন্ত সবকিছুই পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয়ে আসে। ভ্যানিবেলস এবং রবার্টসন বেশ কয়েকদিন ধরেই একটা খেলা করে আসছিল। খেলাটা ছিল বেশ অদ্ভুত।
তারা নিজেদের অপরাধী ভাবতে পছন্দ করত। এবং একজন অপরাধী যেধরণের কাজ করতে পারে তারা সেধরণের কাজই খেলাচ্ছলে করত। তারা প্রায়ই স্কুল পালিয়ে এধরণের কাজ করত। প্রথমদিকে তারা দোকান থেকে কিংবা অন্যদের বাসা বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করত। কিন্ত একদিন ওরা ঠিক করে এসব নয়। কাউকে অত্যাচার করে মারতে হবে।
আর সে পরিকল্পনাতেই খুন হয় জেমস। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় থম্পসন এবং ভ্যানিবেলস শপিং মলে চারিদিকে তাকিয়ে টার্গেট ঠিক করছে। একসময় দেখা যায় ভ্যানিবেলসের হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। এসময় কালো জ্যাকেট পড়ে রবার্টসনকে ঠিক সামনে দিয়ে হাটতে দেখা যায়।
এরপর তারা দুজনে মিলে জেমসকে নিয়ে যায় লিভারপুলগামী এক রেললাইনের ধারে। সেখানে পাথর ছুড়ে খুন করে জেমসকে।নিয়ে যাওয়ার পথে জেমস বেশ কাদছিল। পরবর্তীতে ৩৮ জন লোক পাওয়া যায় যারা জেমসকে কাদতে কাদতে থম্পসন এবং ভ্যানিবেলসের সাথে যেতে দেখেছে। কিন্ত কেউই ব্যাপারটাকে পাত্তা দেয়নি। সবাই ভেবেছিল ছোট ভাই তার বড় দুই ভাইয়ের সাথে হেটে যাচ্ছিল।
২৪ নভেম্বর ১৯৯৪ আদালত থম্পসন এবং ভ্যানিবেলসকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এদের দুজনকে আলাদাভাবে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। রায়ে বলা হয় যতদিন পর্যন্ত না তারা প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে ততদিন তাদের মুক্তি দেয়া হবে না। শেষে ২০০০ সালে দুই জনকে নতুন পরিচয়ে মুক্তি দেওয়া হয়।
সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে হত্যা-পরবর্তী দেহ-লোপাটের ঘটনা নিয়ে। খুন করার এটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা। তারই কৌশল উদ্ভাবনে কুখ্যাত হয়েছেন বিলেতের এক নাপিত। সুইনি টড। তাঁর কেলেংকারি হেলায় চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপার-এর কুকীর্তিকে।
সুইনি টড-ও ছিলেন সিরিয়াল কিলার। তিনি নাকি কম করে একশো ষাট জনকে খুন করেন। খুনগুলো প্রায় একই ভাবে হয়েছিল, মৃতদেহ চালান করার ব্যবস্থাটিও ছিল নিখুঁত। প্রায় আড়াইশো বছর আগের কাহিনি। লন্ডনের ফ্লিট স্ট্রিটে ছিল তাঁর সেলুন। বেশ নামডাকও করেছিলেন টড। কিন্তু তাঁর সেলুনে এসে অনেকেই নাকি আর ফেরেনি! হাতের ধারাল ক্ষুরটি টড সরাসরি তাদের গলায় চালিয়ে দিতেন। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসত রক্ত। তার পর টাকাপয়সা, দামি জিনিসপত্র যা থাকত, হাতিয়ে নিতেন। নানাবিধ লিভার আর কলকবজার মাপা হিসেবে খদ্দেরের বসার চেয়ারটিও নিজের হাতে চমৎকার বানিয়েছিলেন টড। চেয়ারের বিশেষ একটা অংশে চাপ দিলেই সেটা পিছন দিকে উলটে যেত। একই সঙ্গে ফাঁক হয়ে যেত চেয়ারের পিছনের অংশের মেঝে। সেই ফাঁক দিয়ে সটান বেসমেন্টে পড়ত তড়পাতে থাকা দেহটি। শেষ প্রাণবায়ুটিও তত ক্ষণে হাওয়া। তার পর?
এ বার হাত লাগাতেন টডের সঙ্গিনী মিসেস লাভেট। তাঁর ছিল একটি পাই-শপ; টডের সেলুন-লাগোয়া। গোপনে মৃতদেহ থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিতেন লাভেট।
সুইনি টডের কাহিনি ধারাবাহিক ভাবে ‘দ্য স্ট্রিং অব পার্লস: আ রোমান্স’ নামে প্রথম ছাপা হয় ‘দ্য পিপল্স পিরিয়োডিক্যাল অ্যান্ড ফ্যামিলি লাইব্রেরি’ পত্রিকায়, ১৮৪৬-৪৭ নাগাদ। তার পরেও অজস্র বার লেখা হয়েছে ‘সুইনি টড: দ্য ডেমন বারবার অব ফ্লিট স্ট্রিট’-এর গল্প। বহু সিনেমা, নাটক, মিউজিক্যাল হয়েছে। অবশ্য সবই ফিকশনের আদলে। সুইনি টডের মিথ এ সব হাড়হিম করা সৃষ্টিকে বারে বারে সুপারহিট করে দিয়েছে। মনস্তত্ত্ব যাকে ব্যাখ্যা করছে, আমাদের অবচেতনে থাকা সবচেয়ে ভয়ংকর ভয় হিসাবে। ২০০৭-এর জনি ডেপ অভিনীত টিম বার্টনের ‘সুইনি টড’-এ যেমন মিট পাই-এর প্রসঙ্গে বলাই হচ্ছে— ‘উই উইল সার্ভ এনি ওয়ান অ্যান্ড টু এনি ওয়ান অ্যাট অল!’
ইতিহাসবিদদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, ‘সুইনি টড’ নেহাতই বানানো গপ্পো, কিংবা, বিভিন্ন সিরিয়াল কিলার ও অপরাধীর কীর্তিকলাপ একজোট হয়ে জন্ম দিয়েছিল এই ভয়াল মিথের। কিন্তু চলতি ধারণার বিপরীতে গিয়ে সুইনি টডকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে, তার খুনখারাবিকে সত্য ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও নৃতত্ত্ববিদ পিটার হ্যাইনিং। গবেষণায় তিনি বলছেন, ১৭৫৬ সালের ২৬ অক্টোবর সুইনি টডের জন্ম। ছেলেবেলা থেকেই বাড়ির অশান্ত পরিবেশ, বাবা-মায়ের খারাপ সম্পর্ক তাঁকে ঠেলে দেয় অপরাধের দিকে। ছোট্ট একটা চুরির দায়ে ১৭৭০ সালে তাঁর জেল হয়। সেখানেই তাঁর ক্ষৌরকর্মে হাতেখড়ি। পাঁচ বছর তিনি জেলের ক্ষৌরকারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। জেল থেকে বেরনোর পর নিজের সেলুন খোলেন ১৮৬ নম্বর ফ্লিট স্ট্রিটে, যার লাগোয়া ছিল একটি পাই-শপ। ক্রমে শুরু হয় সেই ভয়ংকর হত্যালীলা। হ্যাইনিং-এর তথ্য অনুযায়ী, বহু খুন করলেও, দেহ না-মেলায়, মোটে একটি খুনের দায়েই শেষমেশ দোষী সাব্যস্ত হন টড। ওল্ড বেইলি-র আদালতে তাঁর বিচার চলে। ১৮০২-এর ২৫ জানুয়ারি হাজার-হাজার জনতার সামনে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
কোন মন্তব্য নেই