কেয়ার
কেয়ার
![Related image](https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/9/94/CARE_ICON_COLOR.jpg)
- মা। আমার সময়টা কোথায়? দেখছোই তো অফিস থেকে এসেও ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে হয়। খাওয়ার ও তো সময় পাই না।
- বউমাটার কথা একটু চিন্তা কর বাবা।
- মা দেখো এরকম প্যারা আমি নিতে পারবো না। তুমি কাল নিয়ে যেয়ো ডাক্তারের কাছে।
- আমাকেই তো নিতে হবে। তুই তোর অফিস আর কাজ নিয়েই থাক।
.
কথাটি বলে মা আমার রুম থেকে চলে যায়। নীলার সাথে আমার বিয়েটা হয় পারিবারিক ভাবেই। কিন্তু আমি তাকে একদমই পছন্দ করতাম না। পছন্দ করতাম না এর অনেক কারণ রয়েছে। আমি একটি মেয়েকে অনেক ভালোবাসতাম। কিন্তু তার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যায়। আর সেই সময় থেকেই আমার মনটাও পাথর হয়ে যায়। কিন্তু আমি তাকে এখনো খুব ভালবাসি।
.
দুই বছর হবে আমার আর নীলার বিয়ের বয়স। বিয়েটা করেছি মা-বাবার প্যারাতেই। তাদের অনেক বুঝিয়েছি যে আমি বিয়ে করবো না। কিন্তু তাদের চাপেই আমার বিয়েটা করতে হয়। আর অনিমা হচ্ছে আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ড। যে এখন অন্য কারো বউ। অনিমা হিন্দু ধর্মের ছিলো। কিন্তু কোনো এক অচেনা নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল আসে। সেইখান থেকেই অনিমার সাথে আমার রিলেশন হয়ে যায়।
.
আট বছর আগের কথা। তখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তো একদিন ভুলে আমার মোবাইলে কল আসে। কথা বলে পরে বুঝলাম যে ভুলে কল দিয়ে ফেলেছে। সেইদিন থেকেই কম বেশি কথা হতো তার সাথে। এভাবে বেশ কয়েকদিন কথা বলার পর আমাদের মাঝে একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়। তখন আমরা একদিন প্লানিং করি যে দেখা করবো। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ টা সাধারণত বুঝা যায়। কিন্তু আমার আর অনিমার ফ্রেন্ডশিপের মধ্যে অনেক কিছু ভর করতো। যেটা কে ভালবাসায় পরিণত হয়ে যায়।
.
তো একদিন দেখা করলাম দু'জনে। আমি তার পছন্দ মতো সবুজ রংয়ের শার্ট পড়লাম এবং অনিমাও সবুজ রংয়ের একটা ড্রেস পড়ে গেলো। প্রথম রেস্টুরেন্টে দেখা হলো। আর আমি তাকে ঐখানেই প্রথম দেখি। তাকে দেখে আমি আরো বেশি গভীর হয়ে যাই। শুধু যে আমি গভীর হয়ে গেছিলাম তা কিন্তু নয় অনিমাও আমার মতো ছিলো। আমি সেইদিন প্রথম তাকে ভালবাসার কথা জানালাম। তার আচরণ দেখে বুঝা যায় সেও রাজি।
.
তো এভাবে আমাদের ৩ বছর হয়ে যায় রিলেশন। ও যে অন্য ধর্মের সেটা প্রথমেই জানতাম। ও আমার ব্যাপারে জানতো আমিও ওর ব্যাপারে সব জানতাম। কিন্তু যখন ফ্যামিলিকে বিষয়টা জানাই তারা রাজি হয়নি। রাজি না হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো। কারণ সমাজের মানুষ এইগুলো মেনে নিবে না। এর কিছুদিন পরেই শুনি অনিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর অনিমাও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে কিছু করবে না। শেষে অনিমার বিয়ে হয়ে যায়।
.
আমি মানুষিক ভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলাম। এর কিছুদিন পর আমার একটা জব হয়ে যায়। বাবার বন্ধুর অফিসে। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। তো একদিন বাবা-মা আমার রুমে আসে। তখন আমি অফিসের কাজই করছিলাম ল্যাপটপে।
.
- কি করছিস বাবা?
- এইতো একটু কাজ করছি। কেনো কিছু বলবে?
- হ্যা কিছু বলার ছিলো।
- হুম বলো।
- বাবা আমাদের তো বয়স হয়েছে। কতদিন বাঁঁচবো কে জানে। যদি মরার আগে বউমার মুখ দেখে যেতাম। তাহলে মারা গিয়েও খুশিতে থাকতাম।
- মা। এইসব কি কথা বলতেছো? বাবা তুমি একটু মা কে বুঝাও। আমি বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না।
- আমি তোর মা'কে কি বুঝাবো। আমি নিজেও তো চাই। তুই বিয়ে কর। শেষ বয়সটা নাতি-নাতনির সাথে কাটাতে চাই।
- আমি বিয়ে করলে তোমরা খুসি তো? আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা যা ইচ্ছে করো।
- আলহামদুলিল্লাহ্। কালই নীলাদের বাসায় যাবো। তুই কাল অফিসে যাবি না।
- আমি অফিস মিস দিতে পারবো না। যা করার তোমরা করো গিয়ে।
.
আচ্ছা আমরাই করবো যা করার। নীলাকে কোনো এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মা দেখে। আর প্রথম দেখাতেই তার ভাল লেগে যায় নীলাকে। আর সেইদিন থেকেই মায়ের মুখ এই নীলা নীলা নামটি শুনতে শুনতে আমার কান পচে গেছে। আমি তখন অনিমাকে ভুলতে পারিনি। কিন্তু আধোও কি পারবো সেটা নিজেও জানিনা।
.
পরেরদিন তারা নীলাদের বাসায় যায়। আমাকে অনেকবার কল দিয়েছিলো। কিন্তু আমি কলটি ধরিনি। তারা ঐ দিন গিয়ে বিয়ের কথা পাকা করে আসে। কিন্তু বিয়েতে আমার কোনো ইচ্ছেই নেই। শুধু মাত্র নামেই বিয়েটা করছি। বাবা-মায়ের জন্য। ছোট খাটো অনুষ্ঠান করে বিয়েটা হয়ে যায়। বাসা বড়তি মেহমান কিন্তু আমি ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
.
বাসররাতে কোনো কথাও হয়নি নীলার সাথে। ও ওর মতো আর আমি আমার মতো। সবসময় যা করতাম তা করেই বাসর রাত কেটে যায়। কিন্তু নীলার সাথে আমি প্রথম কথা বলেছিলাম আমাদের বিয়ের দুই মা পর। অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরি। বাসাটা পুরো নিরব। কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে নীলাকে জিজ্ঞাসা করি।
.
- মা-বাবা বাসায় নেই?
- জ্বি না। আপনার খালা অসুস্থ। মা-বাবা তাদের বাসায় গেছেন। আপনি ফ্রেশ হয়েনিন। আমি টেবিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
- তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি বাহিরে থেকে খেয়ে এসেছি।
- ওহহহ।
- আপনি খেয়ে নিয়েন।
.
আমার রুমে চলে আসি। আমার রুমে দুইটা বেড ছিলো। আগে একটাই ছিলো। বিয়ের পর দুইটা বেড হয়। এক বেড এ আমি থাকি অন্য বেডে থাকতো নীলা। তো এভাবেই কেটে গেলো আরো একটি বছর। একদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। রাত তখন ২:৩০ মিনিট। মা-বাবাও ঘুমিয়ে আছেন তাদের রুমে। আমি ল্যাপটপে অফিসের কাজ করতে ছিলাম। কিন্তু ঐদিন দেখলাম নীলা কেমন জানি করছিলো। বিছানায় বসে আছে মাথায় দুই হাত দিয়ে। ব্যাপারটা আমার কাছে একটু কেমন জানি লাগলো। আমি তার কাছে গেলাম।
.
- কোনো সমস্যা?
- মাথা নাড়িয়ে বললো। না।
- তাহলে শুয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়েছে।
.
আমার কথার কোনো উওর দিলো না। আমি কথাটি বলে আমার বেড এ চলে আসি। ১০ মিনিট পর আবারো তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম শুয়েছে কিনা। কিন্তু না ঐ ভাবেই বসে আছে। আমি আবারো গেলাম তার সামনে।
.
- কি হয়েছে? অসুস্থ আপনি?
- আবারো মাথা নাড়িয়ে না বললো।
.
আমার তো একটু সন্দেহ হলো। আমি আর পাশে গিয়ে বসি। এবং মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিতে গিয়েই দেখলাম। তার পুরো শরীর গরম হয়ে রয়েছে। মানে অনেক জ্বর এসেছে। রাত তখন ৩ টা বেজে গেছে প্রায়। মা কে ডাকবো। কিন্তু এত রাতে কি মাকে ডাকা ভাল হবে? পরে আমি নিজেই তাকে জল পট্টি দিয়ে দিলাম।
.
- রাতে খেয়েছিলেন?
- উঁহুম।
- কেনো খাননি?
- এমনি ভালো লাগছিলো না খেতে।
- খাবার রাখা আছে টেবিলে?
- হ্যা। খাবেন? নিয়ে আসবো আপনার জন্য?
- আপনার আনতে হবে না। আপনি চুপ-চাপ শুয়ে থাকুন। আমি নিয়ে আসছি।
.
খাবার গুলো একটু গরম করলাম। গ্লাসে দুধ রাখা ছিলো। ঐ গুলো গরম করলাম। আমি বুঝতেছি না কি করবো। কিন্তু কেউ একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। ওর জায়গায় যদি অনিমা থাকতো তাহলে কি আমি কিছু করতাম না? ও থাকলে যা করতাম। তাই করছিলাম। খাবার গুলো নিয়ে আসলাম।
.
- উঠে বসুন। আর খাবার গুলো খেয়েনিন।
- আমার খেতে ভালো লাগছে না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন গিয়ে।
- একটু খেয়ে মেডিসিন নিন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
- আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
- আচ্ছা হা করুন আমি খাইয়ে দেই।
- আপনি খাইয়ে দিবেন?
- হ্যা আমিই দিবো।
.
পরে খাইয়ে দিলাম তাকে। তার চোখে পানি এসে পড়েছিলো। কিন্তু কারণটা পরে বুঝতে পারি। গ্লাসে দুধ ছিলো ঐ গুলো খেলো। পরে আমার কাছে কিছু মেডিসিন ছিলো জ্বরের। ঐ গুলো তাকে খেতে বললাম। সেও খেয়ে নিলো।
.
- আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনি ঘুমিয়ে পড়লে আমি ঘুমাবো।
- হ্যা আচ্ছা। আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখবেন? কেঁদে বললো কথাটি।
- হ্যা বলেন।
- আমি একটু আমার বুকে মাথা রাখতে চাই। প্লিজ আমার এই আশা টুকু রাখবেন?
.
একটু ভাবলাম তার কথা গুলো। পরে তাকে বুকে নিলাম। সে আলতোভাবে তার দুই হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। কিন্তু আমি কারো কান্না সয্য করতে পারিনা। তাই আমার কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছিলো। কিন্তু আমার কি দোষ। আমি তো চাইনি অনিমার জায়গাটা অন্য কাউকে দিতে।
.
- কাঁদছেন কেনো?
- না। এমনি। আপনি অনেক ভালো।
- আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।
.
তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি আমার বিছানায় আসলাম। আমিও ভাবছিলাম তার কথা গুলো। কেনো জানি কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে অশ্রু এসে পড়ে। চোখ মুছে তার দিকে তাকালাম। দেখি সে ঘুমিয়ে পরেছে। আমিও একটু পর ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রেডি হলাম। এবং মা'কে বললাম যে নীলা অসুস্থ। একটু খেয়াল রেখো।
.
অফিসে চলে আসলাম। অফিসের কাজের মধ্যে নীলার কথা মনে পড়লো। আর নীলার নম্বরটি আমার মোবাইলে সেইভ করাই ছিলো। কিন্তু মা'কে কল দিলাম।
.
- হ্যালো মা।
- হ্যা বাবা বল।
- নীলার জ্বর কমেছে?
- হ্যা একটু কমেছে।
- আচ্ছা বেশি অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেয়ো। রাখছি আমি।
.
এভাবে কেটে যাচ্ছিলো। আগের থেকে কিছুটা ভাল ভাবেই চলছিলো। তো একদিন নীলা অসুস্থ হয়ে পরে। কিন্তু সেইদিন আমি অফিসে ছিলাম। এবং বাবা-মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি নীলা প্রেগন্যান্ট। আমি তাড়া-তাড়ি অফিস থেকে বাসায় এসে পরি ঐ দিন। সত্যি বলতে আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম কথাটি শুনে। আর আমি নীলার সাথে এতদিন অনেক বাজে ব্যবহার করেছি। ঐ দিন ওর জন্য ওর পছন্দের কিছু খাবার নিয়ে যাই।
.
- কিরে বাবা আজ এত তাড়া-তাড়ি আসলি।
- মা। নীলা কোথায়?
- নীলা ওর রুমে।
.
আমি তাড়া-তাড়ি করে নীলার কাছে গেলাম। আমাকে দেখে সেও অবাক হয়ে যায়। কিন্তু আমি সেইদিন কেমন জানি হয়ে গিয়েছিলাম। তাড়া-তাড়ি তার কাছে গেলাম। এবং আপনি থেকে তুমি করেই বলতেছিলাম। তার পছন্দের খাবার গুলো তার কাছে দিলাম। সেও অনেক হ্যাপি হয় ঐদিন।
.
- আজ থেকে কোন কাজ করবে না তুমি।
- জ্বি আমাকে বলছেন?
- হ্যা তোমাকেই বলছি। যা লাগবে মা'কে বলবে।
- হুম ঠিক আছে। আপনি ফ্রেশ হয়েনিন।
- হ্যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আজ একসাথে খাবো সবাই।
- সত্যি?
-হুমম।
.
ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এবং নীলাকে নিয়ে খাবারের টেবিলে গেলাম। আমাদের এরকম আচরণ দেখে বাবা-মাও খুব খুশি হলেন। এভাবে কাটছিলো আমাদের জীবন। নীলার ভালবাসা পেয়ে অনিমার কথাই ভুলে গেছিলাম আসতে আসতে। হ্যা এখন আমি আমার বউটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। খুব ভালভাবেই আমাদের দিন কাটছিলো।
.
- এই শোনো না।
- হ্যা বলো।
- আরাফের জন্য ডায়াপেন্ট লাগবে। শেষ হয়ে গেছে কিন্তু।
- আচ্ছা আমি আসার সময় নিয়ে আসবো।
- আচ্ছা তাড়া-তাড়ি এসো।
- শোনো। আরাফের আম্মুর কিছু লাগবে না?
- জ্বি না আরাফের আম্মুর শুধু আরাফের আব্বুকেই লাগবে।
- তাই?
- জ্বি তাই। আমার বাবাটা কি করে?
- আপনার বাবাটা খাচ্ছে। আপনি তাড়া-তাড়ি আসুন আপনার সাথে খেলবে।
- আচ্ছা। আল্লাহ্ হাফেজ।
- জ্বি আল্লাহ্ হাফেজ।
.
কিভাবে যে কি হয়ে গেলো। সেটা ভাবতেও পারিনি। যাক আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আমি বাসায় যাওয়ার পথে আমার বাবাটার জন্য ডায়াপেন্ট নিলাম এবং কিছু ফ্রুটস্ নিয়ে গেলাম। বাসায় গিয়ে প্রথমেই আরাফের মায়ের কোল থেকে আরাফকে নিলাম। এবং আঁদর করলাম আমার বাবাটাকে। আর নীলা আমার কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলছে। একটু আদর আরাফের আম্মুর জন্য রেখো।
মা- বাবাও অনেক খুশি। তারা তো এখন তাদের নাতিকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা। আর তার ছেলের বউকে তো তার ছেলের থেকেও বেশি ভালবাসে। এভাবেই ভালবাসা গুলো কেটে যায়।
হৃদয় নাদিম
কোন মন্তব্য নেই