রোদ্দুর
রোদ্দুর
'রুদ্র কতদিন ভোর দেখে না!ভোর ওর ভাল লাগে না তা নয়। ইট-কাঠ-পাথরের শহরে ভোর দেখে কে?এই শহরের ভোর গুলো কেমন কালশিটে পড়া লাগে। এত ধূসর! এত মেঘলা! রুদ্র ঘড়ির দিকে তাকালো। সাড়ে সাতটা । এলার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে গেল। পাঁচমিনিট যেতে না যেতেই লাফ দিয়ে উঠলো।এইরে!আজ যে সিএসইর ল্যাব এসাইনমেন্ট আছে! কোনরকমে ব্রাশ দাঁতের উপর বুলিয়ে শার্ট প্যান্ট পড়তে পড়তে দৌড়ুলো। নিজেকে ধন্যবাদ দিল।ভাগ্যিস কাল রাতেই জামাকাপড় লন্ড্রী করিয়ে এনেছিল। প্রেজেন্টেশনের দিন ফিটফাট থাকতে হয়।তখন রুদ্রর নিজেকে কেমন জংলী জংলী লাগে। ফর্মাল ড্রেসড জংলী রুদ্র।
.
নির্জন নামটা কে রেখেছিল কে জানে। আদতে নির্জন কি শান্ত! নাহ। আগাগোড়া ভয়ানক রোমান্টিক মানুষটা । ভীষণই আবেগী। গত মিনিট কুড়ি ধরে নির্জন যে কাজটা করতে হিমশিম খাচ্ছে তা হলো প্যান্টের বোতাম।বোতাম লাগানোর গাড এতটাই ছোট যে না কাটলে বোতাম লাগানো সম্ভব না।অথচ এই মুহূর্তের নির্জনের আশে পাশে ভোতা এক ছুরি ছাড়া কিচ্ছু নেই। ছুরিটা অনেকক্ষন ধরে মুখ ভেঙাচ্ছিল।নির্জন অগত্যা সেটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিল।উপায় নেই।ল্যাব এসাইনমেন্ট। যেতেই হবে।
.
রাতে রনি ঘুমিয়েছেই চারটে বাজিয়ে। এলার্মের বিরক্তিকর শব্দে ওর ঘুম ভাঙলো প্রচণ্ড ক্লান্তি আর মাথাব্যথা নিয়ে । বিছানা ছাড়লো নিতান্তই অনিচ্ছায়। ম্যাজমেজে শরীর আর স্যাঁতসেঁতে মন নিয়ে চললো ভার্সিটি । ল্যাব এসাইনমেন্ট। ফেঁসে গেছে।
.
নির্জন-রনি-রুদ্র। এসইউ ইউনিভার্সিটির সিএসইর স্টুডেন্ট। তিন বন্ধু। একই সাথে থাকে ফ্লাট ভাড়া নিয়ে। গল্পটা এই তিনজনের। কিন্তু আলাদা আলাদা । কোথাও বিশ্বাস ভাঙা, কোথাও নিখাদ বন্ধুত্ব, কোথাও ভালবাসা, কোথাও বা নীলচে বিষণ্ণতা। তিনটি আলাদা মানুষ। তিনটি আলাদা ব্যক্তিত্ব। তিনটি আলাদা গল্প। কিন্তু কোথাও না কোথাও মানুষগুলা একই। হয় বন্ধুত্বে কিংবা বিষণ্ণতায়।
.
সিএসই ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে আদিবা ডাকলো,
-এই রুদ্র
রুদ্র পেছন দিকে তাকিয়েই আবার সামনে তাকালো।খানিকটা বিরক্ত।মেয়েদের ও সহ্য করতে পারে না। আদরের নেকুপুষুমুনু মেয়েগুলা তো আরো অসহ্য। ন্যাকা ন্যাকা কথা আর গা জ্বলানো ঢং। অসহ্য লাগে রুদ্রর।
-রুদ্র
-বলো
-বলছি আজকে স্নিগ্ধা ম্যাম যা বুঝিয়েছে আমি বুঝিনি পুরোটা । একটু বুঝিয়ে দিবা প্লিজ?
-আমার সময় নেই
বলে হাঁটা ধরলো রুদ্র। আদিবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে। এই ছেলের এত ভাব কিসের ভেবে পায় না আদিবা। রুদ্র ল্যাব রুমের সামনের করিডোরে নির্জন কে পেল।দুইটা মেয়েকে কি যেন বলতেছে। রুদ্র পৌঁছানোর আগেই মেয়ে দুইটা চলে গেল। নির্জন কে গাল বকতে শুনলো 'নিজের বাপের টাকায় সিগারেট খাই।মাইনষের কি? ' রুদ্র হাসলো।
-কি হইছে বাপ?
-আর হওয়া কাকু।এইখানে দাঁড়ায় সিগ্রেট টানতেছিলাম। ফার্স্ট ইয়ারের দুই চেংড়ি এসে গন্ধ গন্ধ করতেছিল।দিলাম দুই ঝাড়ি।
খাস রংপুরিয়ান নির্জন চটে গেলে মুশকিল। ছেলেটা সবসময়ই হাসিখুশি।কিন্তু রেগেছে তো গেছে । ছেলের রাগ বড় সাংঘাতিক।
রুদ্র আবার হাসলো।প্রাণ খোলা কি দাঁত খোলা বোঝা গেল না।নিজের চারিদিকে গাম্ভীর্যের একটা শক্ত দেয়াল তুলে আড়াল করেছে নিজেকে। দেয়ালের একপাশে প্রচণ্ড নিরাসক্ত ।অন্য পাশে প্রচণ্ড উচ্ছল,দুর্বিনত, দামাল এক ছেলে। যার সব কিছু রুদ্র বাক্সবন্দী করে চাবি ফেলে দিয়েছে দূরের আকাশগঙ্গায়।
-রাগিস না বাপ। চল বাসায় যাই।
-রনি কই কাকু?
-ও তো সামনে । চল
-চল
গেটের কাছে এসে রনিকে ডাকলো নির্জন।ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে এলো।কথা বললো না । প্রচন্ড ক্লান্তিতে রনির গলা ভেঙে যায়।
.
নির্জনের লেখালেখির অভ্যাস আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাল পরিচিতিও আছে লেখালেখির সুবাদে। পরিচিতি বেড়েছে ক্যাম্পাসে। ফ্যান-ফলোয়ারও নেহায়েত কম নয়। লাইফটা বেশ স্থির নির্জনের কাছে । বাবা মায়ের আদরের সন্তান। পড়া শেষ, জব, বিয়ে... প্ল্যান আপাতত এটুকুই। বাকী জীবনটা বাবা মায়ের সাথে কাটাবে। বাবা মা তো অনেক করে। যা চাচ্ছে পেয়ে যাচ্ছে। তবুও কেন জানি মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় ওর । খুব একলা একলা লাগে। কোনো একটা মানুষের অভাব বোধ হয়। একান্তই আপনার। যাকে ও ভালবাসবে। মারবে। কাটবে। শাসন করবে। ভাল তো চোখের দেখায় অনেককেই লাগে। সেই মানুষটা কই? .
রুদ্রর খুব মন খারাপ।রনি-নির্জনের দিকে তাকালো রুদ্র। দুজনই ল্যাপটপে মগ্ন। নির্জন গেমসে। রনি কোন মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করছে। সাবধানে দীর্ঘশ্বাস লুকালো রুদ্র। আজ যে কেন মনটা এত অশান্ত!বড্ড বেশি মনে পড়ছে রিদিতাকে । আহ!রিদিতা। আদুরে বেড়ালছানার মত। যাকে দেখলেই ভালবাসতে ইচ্ছে করতো।আচ্ছা! রিদিতা কেন চলে গেল?ভেবে পায় না রুদ্র। নিজেকেই দোষ দেয়।হয়তো রিদিতাকে খুব ভালবাসতে পারেনি। রিদিতা একা যায় নি । রুদ্রর পুরো শখের জীবনটাকে সাথে করে নিয়ে গেছে। যেই ছেলেটা দস্যি, দামাল ছিল। সে কেমন যেন বড্ড বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। মাঝখানে পড়ায় গ্যাপ হয়ে গেছে। এখনও যে পড়তে খুব ভাললাগে তা নয়। বরং এখনো রুদ্র ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছাড়া ভার্সিটি যায় না। কারো সাথে তেমন একটা কথাও বলে না।ফ্রেন্ড সার্কেল সীমিত করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে রুদ্রর ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুঁড়ে পাহাড় কিংবা সমুদ্রের কাছে চলে যায়। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বুক খালি করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো । নির্জন ডাকলো,
-কাকু
-বল বাপ
-রান্না করবা না?
-আজ রনির রান্নার পালা
দুজন একসাথে রনির দিকে তাকালো।
নির্জন ডাকলো,
-রনি
-উ
-রান্না করবি না?
-উ
-কখন?
-কালকে
নির্জন রুদ্র হেসে ফেললো।রুদ্র বললো,
-যা অবস্থা ছেলের। চল আমরাই রান্না করি।
-চলো কাকু
রান্না চাপিয়ে নির্জন রুমে চলে গেছে।রুদ্র ডাইনিং এ বসে আছে। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে এলোমেলো ভাবছে । মাঝে মধ্যে রুদ্রর ইচ্ছে হয় কেউ একজন লাইফে আসুক।ভালবাসুক।শাসন করুক।কিন্তু রিদিতা?আজও তো রিদিতাকেই ভালবাসে রুদ্র। একজীবন একাকীত্ব মাঝে মাঝে রুদ্রর খুব অসহ্য লাগে।নির্মলেন্দুর ভাষায় বলা যায়,
'নিজের জলেই টলমল করে আঁখি,
তাই নিয়ে খুব বিব্রত হয়ে থাকি। '
ভাবতে ভাবতে নাক টানলো।তারপরই লাফ দিয়ে উঠে গেল রান্নাঘরে। ভাত পোড়া গন্ধ বেরুচ্ছে।
.
রনির মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে আছে। মেঘা মেয়েটা খুব ভোগাচ্ছে। কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। অথচ রনি রিলেশনের ব্যাপারে সিরিয়াস না। রনি কিছুতেই সিরিয়াস না আসলে। না ফিউচার, না ক্যারিয়ার না রিলেশন।যার সাথে যতদিন ভাললাগে রিলেশন রাখে। তারপর ডুব দেয়।ফোন অফ, আইডি ডিএক্টিভ,বাসা চেইঞ্জ। এক দু মাস পর ফিরে এসে নতুন রিলেশন। ওর লাস্ট গা'লফ্রেন্ড যাওয়ার পর কিছু একটা হয়েছে। ঠিক কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারছে না রনি।মেয়েটা খানিক ক্ষ্যাপাটে ছিল।কি যেন নাম?হ্যা। অনি । অনি প্রায় সবসময়ই বলতো 'দ্যাখ ছেলে। আমার মত করে তোকে কেউ বুঝবে না।ভালবাসবে না। ' রনি বিরক্ত হোতো।মেয়েটা অতিরিক্ত কথা বলতো।একদিন দুম করেই মেয়েটা হারিয়ে গেল।রনি ঠিক পেল অনি যাওয়ার দুদিন পর। সেদিন দুম করেই অনি বললো,
-রনি
-বল
-তোর হাত ধরে খালি পায়ে সংসদ ভবনের এই রাস্তায় হাঁটবো আজ।
রনি বিরক্ত হলেও রাজি হলো।হাঁটতে হাঁটতে অনি ডাকলো,
-রনি
-বল
-আমি তোকে একটা কথা বলতাম না সবসময়?
-কি?
-আমার মত করে তোকে কেউ বুঝবে না। ভালবাসবে না।
-হু
- আমি আজ কথাটা উইথড্র করে নিলাম।
রনি রিফ্লেক্স বসে অনির মুখ চেপে ধরেছিল। মেয়েটি হেসেছিল।রনি বোঝেনি মেয়েটা কতটা ক্লান্ত হয়ে গেছিলো । কতটা
দুঃখ লুকাতে জানতো। ভালবাসার শাস্তি হিসেবে রনি মেয়েটাকে দিয়েছিল সুগভীর ক্লান্তি। ঠিক তার দেড় সপ্তাহ পর অনি দুম করে হারিয়ে গেল। রনি হাঁফ ছেড়েছিল। যাক বাবা! আপদ গেছে। এক সপ্তাহ পরেই মেঘার সাথে রিলেশন হয়।
রনির কেন জানি আজ কিছু ভাল লাগছে না। বিছানা বালিশে অশান্তি মাখামাখি হয়ে আছে। রনি গাল বকলো মনে মনে। তারপর গান ছেড়ে দিল।
' পায়ের নখের মাটি জানে সে গল্প,
কতটা দূরে মন যেতে পেরেছে,
শরীর কত অল্প।
আগুন নিজে পোড়ে,
নাকি পুড়িয়ে দেয়ার ঠিকে?
তোমায় ভোলা সহজে হবে পালালে কোনদিকে?
ভাবনারা সব মেঘ হয়ে যায় ছু মন্তরে ।'
.
সবেই নতুন একটা গল্প শুরু করেছে নির্জন। মাঝ অব্দি লেখা হয়েছে সবে তখনই ফোনটা এলো। ছাপার অযোগ্য গাল বকলো নির্জন নিজেকে।কোন দুঃখে যে আজ ফোনে লিখতে বসেছে!
সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো যে ফোন দিয়েছে তার উপর।রাগে চিৎকার করে বললো,
-হ্যালো কে বলছেন?
ফোনের ওপাশে কে কি সমাচার জানে না রুদ্ররনি।দুজন একসাথে ঘুরে তাকালো নির্জনের ভয়েস মডিউলেশনে । একশো আশি ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে এক ঝটকায় একেবারে মাইনাস সেভেনটিন। নির্জন খুব মোলায়েম স্বরে বললো,
-হ্যা হ্যা । আজকেই নতুন গল্প দিব।
ফোন রেখে নির্জন বুক চেপে শুয়ে পড়লো।রুদ্ররনি এগিয়ে এসে নির্জনের উপর ঝুঁকলো।ব্যাটা আছে না গেছে? নিঃশ্বাস পড়ছে দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,
-কি রে বাপ?
-আর কাকু। হয়ে গেছে।
-কি?
-হয়ে গেছে কাকু। হয়ে গেছে।
-হারামজাদা না ফেনায়ে কি হইসে ঝেড়ে -হারামজাদা না ফেনায়ে কি হইসে ঝেড়ে কাশ।
-শিমু ফোন দিয়েছিল।
রুদ্ররনি হেসে উঠলো। শিমু নির্জনের লেখার ডাই হার্ড ফ্যান। নির্জনও খানিকটা ক্রাশড মেয়েটির উপর।সে কি না নিজেই ফোন দিয়ে নতুন গল্প চেয়েছে। ওয়াহ!
.
রুদ্র-রনি-নির্জনদের ব্যস্ত দিনগুলো হঠাৎ কেমন ঝিমিয়ে গেছে। সুরকেটে
গেছে কোথাও। রুদ্র বাড়ি চলে যাচ্ছে। রনি ভার্সিটি চেঞ্জ করবে। নির্জন আছে ওর মতই। লেখালেখি, ক্রাশ, পড়াশোনা নিয়ে।
রুদ্রর মাঝে মাঝেই অকারণে মন খারাপ হচ্ছে। আবার সেটা অন্যদের থেকেও লুকিয়েও রাখছে। এর আগেও ও তিনটে ভার্সিটি চেঞ্জ করেছে। এবার সোজা বাড়িই চলে যাচ্ছে। লাইফটা এইরকম কেন হয়? রুদ্রর মাঝে মাঝে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে দূরের কোনো গ্রহে।সম্ভব হলে রুদ্র পালিয়ে যেত অন্য কোনো গ্রহে।যেখানে ওর ভালোলাগা গুলো সিগারেট ফুঁকছে। নিজেও একটা সিগারেট ধরালো। লাইফটাকে কোথাও স্থির কেন্দ্রতে আনা দরকার। কিন্তু সেইটেই হয়না রুদ্রর। ধরাবাঁধা নিয়ম ভালোই লাগে না। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস উড়িয়ে দেয় ঝরাপাতার সাথে।
.
রনির মেজাজ মন কোনটাই ভাল নেই। জানুয়ারিতে বাসা চেঞ্জ করতে হবে।ভার্সিটি চেঞ্জ করতে হবে।মেজাজ খারাপ।মন খারাপ রুদ্রর জন্য।ঝগড়া-খুনসুটি হলেও রুদ্র ওর বন্ধুর চেয়ে ভাই ছিল।একসাথে রাত জাগা হবে না।চিল্লাচিল্লি হবে না। এত না এর ভীড়ে রনি নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে না। এর মধ্যে কেন কে যে অনিকে মিস করছে। মেয়েটা আসলেই বিরক্তিকর। নিজে তো গেছে ভাল কথা। কিন্তু কেন বারবার মনে আসতে হবে?রনি মহা বিরক্ত নিজের উপর। দুটো বছর ওরা একসাথে ছিল। মায়া পড়ে নি কি একটুও?রাত জেগে কতদিন ওরা রাস্তায় হেঁটেছে। রবীন্দ্র সরোবর,হাতিরঝিল ঘুরে বেড়িয়েছে তিন রত্ন।দিনগুলো তো ফিরে আসবে না।রনি ছাপার অযোগ্য একটা গাল বকে সিগারেট ধরালো।
.
নির্জন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে রুদ্র-রনির মাঝে বসে পড়লো।
রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,
-কি হইসে রে বাপ?
-আর কাকু! চৌদ্দ তলায় উঠছিলাম।
-ক্যান?
-বাসা দেখার জন্য।
-দেখছস?
-হু।
-পছন্দ হইসে?
-না
কেউ কোনো কথা বলছে না। চুপচাপ বড্ড। সংসদ ভবনের সামনে বসে আছে। আজ কেউ ফোন চাপছে না। সন্ধ্যে নামি নামি করছে। গল্পেরা মাঝে মাঝে খুব অসহায় হয়ে পড়ে। শুরু হয়ে কখনো শেষ হয় না।কখনো ঝুপ করে শেষ হয়ে যায় বোঝা যায় না।এই বন্ধুত্ব, টুকরো টুকরো গল্পেরা বেঁচে থাকুক ভালবাসায়। রুদ্র সিগারেট চুপচাপ রনির হাতে দিল।রনি নির্জনকে।ধোঁয়া গুলো পাক খেয়ে উঠে মিশে যায় শূণ্যে।।
.
নির্জন নামটা কে রেখেছিল কে জানে। আদতে নির্জন কি শান্ত! নাহ। আগাগোড়া ভয়ানক রোমান্টিক মানুষটা । ভীষণই আবেগী। গত মিনিট কুড়ি ধরে নির্জন যে কাজটা করতে হিমশিম খাচ্ছে তা হলো প্যান্টের বোতাম।বোতাম লাগানোর গাড এতটাই ছোট যে না কাটলে বোতাম লাগানো সম্ভব না।অথচ এই মুহূর্তের নির্জনের আশে পাশে ভোতা এক ছুরি ছাড়া কিচ্ছু নেই। ছুরিটা অনেকক্ষন ধরে মুখ ভেঙাচ্ছিল।নির্জন অগত্যা সেটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিল।উপায় নেই।ল্যাব এসাইনমেন্ট। যেতেই হবে।
.
রাতে রনি ঘুমিয়েছেই চারটে বাজিয়ে। এলার্মের বিরক্তিকর শব্দে ওর ঘুম ভাঙলো প্রচণ্ড ক্লান্তি আর মাথাব্যথা নিয়ে । বিছানা ছাড়লো নিতান্তই অনিচ্ছায়। ম্যাজমেজে শরীর আর স্যাঁতসেঁতে মন নিয়ে চললো ভার্সিটি । ল্যাব এসাইনমেন্ট। ফেঁসে গেছে।
.
নির্জন-রনি-রুদ্র। এসইউ ইউনিভার্সিটির সিএসইর স্টুডেন্ট। তিন বন্ধু। একই সাথে থাকে ফ্লাট ভাড়া নিয়ে। গল্পটা এই তিনজনের। কিন্তু আলাদা আলাদা । কোথাও বিশ্বাস ভাঙা, কোথাও নিখাদ বন্ধুত্ব, কোথাও ভালবাসা, কোথাও বা নীলচে বিষণ্ণতা। তিনটি আলাদা মানুষ। তিনটি আলাদা ব্যক্তিত্ব। তিনটি আলাদা গল্প। কিন্তু কোথাও না কোথাও মানুষগুলা একই। হয় বন্ধুত্বে কিংবা বিষণ্ণতায়।
.
সিএসই ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে আদিবা ডাকলো,
-এই রুদ্র
রুদ্র পেছন দিকে তাকিয়েই আবার সামনে তাকালো।খানিকটা বিরক্ত।মেয়েদের ও সহ্য করতে পারে না। আদরের নেকুপুষুমুনু মেয়েগুলা তো আরো অসহ্য। ন্যাকা ন্যাকা কথা আর গা জ্বলানো ঢং। অসহ্য লাগে রুদ্রর।
-রুদ্র
-বলো
-বলছি আজকে স্নিগ্ধা ম্যাম যা বুঝিয়েছে আমি বুঝিনি পুরোটা । একটু বুঝিয়ে দিবা প্লিজ?
-আমার সময় নেই
বলে হাঁটা ধরলো রুদ্র। আদিবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে। এই ছেলের এত ভাব কিসের ভেবে পায় না আদিবা। রুদ্র ল্যাব রুমের সামনের করিডোরে নির্জন কে পেল।দুইটা মেয়েকে কি যেন বলতেছে। রুদ্র পৌঁছানোর আগেই মেয়ে দুইটা চলে গেল। নির্জন কে গাল বকতে শুনলো 'নিজের বাপের টাকায় সিগারেট খাই।মাইনষের কি? ' রুদ্র হাসলো।
-কি হইছে বাপ?
-আর হওয়া কাকু।এইখানে দাঁড়ায় সিগ্রেট টানতেছিলাম। ফার্স্ট ইয়ারের দুই চেংড়ি এসে গন্ধ গন্ধ করতেছিল।দিলাম দুই ঝাড়ি।
খাস রংপুরিয়ান নির্জন চটে গেলে মুশকিল। ছেলেটা সবসময়ই হাসিখুশি।কিন্তু রেগেছে তো গেছে । ছেলের রাগ বড় সাংঘাতিক।
রুদ্র আবার হাসলো।প্রাণ খোলা কি দাঁত খোলা বোঝা গেল না।নিজের চারিদিকে গাম্ভীর্যের একটা শক্ত দেয়াল তুলে আড়াল করেছে নিজেকে। দেয়ালের একপাশে প্রচণ্ড নিরাসক্ত ।অন্য পাশে প্রচণ্ড উচ্ছল,দুর্বিনত, দামাল এক ছেলে। যার সব কিছু রুদ্র বাক্সবন্দী করে চাবি ফেলে দিয়েছে দূরের আকাশগঙ্গায়।
-রাগিস না বাপ। চল বাসায় যাই।
-রনি কই কাকু?
-ও তো সামনে । চল
-চল
গেটের কাছে এসে রনিকে ডাকলো নির্জন।ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে এলো।কথা বললো না । প্রচন্ড ক্লান্তিতে রনির গলা ভেঙে যায়।
.
নির্জনের লেখালেখির অভ্যাস আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাল পরিচিতিও আছে লেখালেখির সুবাদে। পরিচিতি বেড়েছে ক্যাম্পাসে। ফ্যান-ফলোয়ারও নেহায়েত কম নয়। লাইফটা বেশ স্থির নির্জনের কাছে । বাবা মায়ের আদরের সন্তান। পড়া শেষ, জব, বিয়ে... প্ল্যান আপাতত এটুকুই। বাকী জীবনটা বাবা মায়ের সাথে কাটাবে। বাবা মা তো অনেক করে। যা চাচ্ছে পেয়ে যাচ্ছে। তবুও কেন জানি মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় ওর । খুব একলা একলা লাগে। কোনো একটা মানুষের অভাব বোধ হয়। একান্তই আপনার। যাকে ও ভালবাসবে। মারবে। কাটবে। শাসন করবে। ভাল তো চোখের দেখায় অনেককেই লাগে। সেই মানুষটা কই? .
রুদ্রর খুব মন খারাপ।রনি-নির্জনের দিকে তাকালো রুদ্র। দুজনই ল্যাপটপে মগ্ন। নির্জন গেমসে। রনি কোন মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করছে। সাবধানে দীর্ঘশ্বাস লুকালো রুদ্র। আজ যে কেন মনটা এত অশান্ত!বড্ড বেশি মনে পড়ছে রিদিতাকে । আহ!রিদিতা। আদুরে বেড়ালছানার মত। যাকে দেখলেই ভালবাসতে ইচ্ছে করতো।আচ্ছা! রিদিতা কেন চলে গেল?ভেবে পায় না রুদ্র। নিজেকেই দোষ দেয়।হয়তো রিদিতাকে খুব ভালবাসতে পারেনি। রিদিতা একা যায় নি । রুদ্রর পুরো শখের জীবনটাকে সাথে করে নিয়ে গেছে। যেই ছেলেটা দস্যি, দামাল ছিল। সে কেমন যেন বড্ড বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। মাঝখানে পড়ায় গ্যাপ হয়ে গেছে। এখনও যে পড়তে খুব ভাললাগে তা নয়। বরং এখনো রুদ্র ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছাড়া ভার্সিটি যায় না। কারো সাথে তেমন একটা কথাও বলে না।ফ্রেন্ড সার্কেল সীমিত করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে রুদ্রর ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুঁড়ে পাহাড় কিংবা সমুদ্রের কাছে চলে যায়। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বুক খালি করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো । নির্জন ডাকলো,
-কাকু
-বল বাপ
-রান্না করবা না?
-আজ রনির রান্নার পালা
দুজন একসাথে রনির দিকে তাকালো।
নির্জন ডাকলো,
-রনি
-উ
-রান্না করবি না?
-উ
-কখন?
-কালকে
নির্জন রুদ্র হেসে ফেললো।রুদ্র বললো,
-যা অবস্থা ছেলের। চল আমরাই রান্না করি।
-চলো কাকু
রান্না চাপিয়ে নির্জন রুমে চলে গেছে।রুদ্র ডাইনিং এ বসে আছে। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে এলোমেলো ভাবছে । মাঝে মধ্যে রুদ্রর ইচ্ছে হয় কেউ একজন লাইফে আসুক।ভালবাসুক।শাসন করুক।কিন্তু রিদিতা?আজও তো রিদিতাকেই ভালবাসে রুদ্র। একজীবন একাকীত্ব মাঝে মাঝে রুদ্রর খুব অসহ্য লাগে।নির্মলেন্দুর ভাষায় বলা যায়,
'নিজের জলেই টলমল করে আঁখি,
তাই নিয়ে খুব বিব্রত হয়ে থাকি। '
ভাবতে ভাবতে নাক টানলো।তারপরই লাফ দিয়ে উঠে গেল রান্নাঘরে। ভাত পোড়া গন্ধ বেরুচ্ছে।
.
রনির মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে আছে। মেঘা মেয়েটা খুব ভোগাচ্ছে। কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। অথচ রনি রিলেশনের ব্যাপারে সিরিয়াস না। রনি কিছুতেই সিরিয়াস না আসলে। না ফিউচার, না ক্যারিয়ার না রিলেশন।যার সাথে যতদিন ভাললাগে রিলেশন রাখে। তারপর ডুব দেয়।ফোন অফ, আইডি ডিএক্টিভ,বাসা চেইঞ্জ। এক দু মাস পর ফিরে এসে নতুন রিলেশন। ওর লাস্ট গা'লফ্রেন্ড যাওয়ার পর কিছু একটা হয়েছে। ঠিক কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারছে না রনি।মেয়েটা খানিক ক্ষ্যাপাটে ছিল।কি যেন নাম?হ্যা। অনি । অনি প্রায় সবসময়ই বলতো 'দ্যাখ ছেলে। আমার মত করে তোকে কেউ বুঝবে না।ভালবাসবে না। ' রনি বিরক্ত হোতো।মেয়েটা অতিরিক্ত কথা বলতো।একদিন দুম করেই মেয়েটা হারিয়ে গেল।রনি ঠিক পেল অনি যাওয়ার দুদিন পর। সেদিন দুম করেই অনি বললো,
-রনি
-বল
-তোর হাত ধরে খালি পায়ে সংসদ ভবনের এই রাস্তায় হাঁটবো আজ।
রনি বিরক্ত হলেও রাজি হলো।হাঁটতে হাঁটতে অনি ডাকলো,
-রনি
-বল
-আমি তোকে একটা কথা বলতাম না সবসময়?
-কি?
-আমার মত করে তোকে কেউ বুঝবে না। ভালবাসবে না।
-হু
- আমি আজ কথাটা উইথড্র করে নিলাম।
রনি রিফ্লেক্স বসে অনির মুখ চেপে ধরেছিল। মেয়েটি হেসেছিল।রনি বোঝেনি মেয়েটা কতটা ক্লান্ত হয়ে গেছিলো । কতটা
দুঃখ লুকাতে জানতো। ভালবাসার শাস্তি হিসেবে রনি মেয়েটাকে দিয়েছিল সুগভীর ক্লান্তি। ঠিক তার দেড় সপ্তাহ পর অনি দুম করে হারিয়ে গেল। রনি হাঁফ ছেড়েছিল। যাক বাবা! আপদ গেছে। এক সপ্তাহ পরেই মেঘার সাথে রিলেশন হয়।
রনির কেন জানি আজ কিছু ভাল লাগছে না। বিছানা বালিশে অশান্তি মাখামাখি হয়ে আছে। রনি গাল বকলো মনে মনে। তারপর গান ছেড়ে দিল।
' পায়ের নখের মাটি জানে সে গল্প,
কতটা দূরে মন যেতে পেরেছে,
শরীর কত অল্প।
আগুন নিজে পোড়ে,
নাকি পুড়িয়ে দেয়ার ঠিকে?
তোমায় ভোলা সহজে হবে পালালে কোনদিকে?
ভাবনারা সব মেঘ হয়ে যায় ছু মন্তরে ।'
.
সবেই নতুন একটা গল্প শুরু করেছে নির্জন। মাঝ অব্দি লেখা হয়েছে সবে তখনই ফোনটা এলো। ছাপার অযোগ্য গাল বকলো নির্জন নিজেকে।কোন দুঃখে যে আজ ফোনে লিখতে বসেছে!
সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো যে ফোন দিয়েছে তার উপর।রাগে চিৎকার করে বললো,
-হ্যালো কে বলছেন?
ফোনের ওপাশে কে কি সমাচার জানে না রুদ্ররনি।দুজন একসাথে ঘুরে তাকালো নির্জনের ভয়েস মডিউলেশনে । একশো আশি ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে এক ঝটকায় একেবারে মাইনাস সেভেনটিন। নির্জন খুব মোলায়েম স্বরে বললো,
-হ্যা হ্যা । আজকেই নতুন গল্প দিব।
ফোন রেখে নির্জন বুক চেপে শুয়ে পড়লো।রুদ্ররনি এগিয়ে এসে নির্জনের উপর ঝুঁকলো।ব্যাটা আছে না গেছে? নিঃশ্বাস পড়ছে দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,
-কি রে বাপ?
-আর কাকু। হয়ে গেছে।
-কি?
-হয়ে গেছে কাকু। হয়ে গেছে।
-হারামজাদা না ফেনায়ে কি হইসে ঝেড়ে -হারামজাদা না ফেনায়ে কি হইসে ঝেড়ে কাশ।
-শিমু ফোন দিয়েছিল।
রুদ্ররনি হেসে উঠলো। শিমু নির্জনের লেখার ডাই হার্ড ফ্যান। নির্জনও খানিকটা ক্রাশড মেয়েটির উপর।সে কি না নিজেই ফোন দিয়ে নতুন গল্প চেয়েছে। ওয়াহ!
.
রুদ্র-রনি-নির্জনদের ব্যস্ত দিনগুলো হঠাৎ কেমন ঝিমিয়ে গেছে। সুরকেটে
গেছে কোথাও। রুদ্র বাড়ি চলে যাচ্ছে। রনি ভার্সিটি চেঞ্জ করবে। নির্জন আছে ওর মতই। লেখালেখি, ক্রাশ, পড়াশোনা নিয়ে।
রুদ্রর মাঝে মাঝেই অকারণে মন খারাপ হচ্ছে। আবার সেটা অন্যদের থেকেও লুকিয়েও রাখছে। এর আগেও ও তিনটে ভার্সিটি চেঞ্জ করেছে। এবার সোজা বাড়িই চলে যাচ্ছে। লাইফটা এইরকম কেন হয়? রুদ্রর মাঝে মাঝে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে দূরের কোনো গ্রহে।সম্ভব হলে রুদ্র পালিয়ে যেত অন্য কোনো গ্রহে।যেখানে ওর ভালোলাগা গুলো সিগারেট ফুঁকছে। নিজেও একটা সিগারেট ধরালো। লাইফটাকে কোথাও স্থির কেন্দ্রতে আনা দরকার। কিন্তু সেইটেই হয়না রুদ্রর। ধরাবাঁধা নিয়ম ভালোই লাগে না। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস উড়িয়ে দেয় ঝরাপাতার সাথে।
.
রনির মেজাজ মন কোনটাই ভাল নেই। জানুয়ারিতে বাসা চেঞ্জ করতে হবে।ভার্সিটি চেঞ্জ করতে হবে।মেজাজ খারাপ।মন খারাপ রুদ্রর জন্য।ঝগড়া-খুনসুটি হলেও রুদ্র ওর বন্ধুর চেয়ে ভাই ছিল।একসাথে রাত জাগা হবে না।চিল্লাচিল্লি হবে না। এত না এর ভীড়ে রনি নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে না। এর মধ্যে কেন কে যে অনিকে মিস করছে। মেয়েটা আসলেই বিরক্তিকর। নিজে তো গেছে ভাল কথা। কিন্তু কেন বারবার মনে আসতে হবে?রনি মহা বিরক্ত নিজের উপর। দুটো বছর ওরা একসাথে ছিল। মায়া পড়ে নি কি একটুও?রাত জেগে কতদিন ওরা রাস্তায় হেঁটেছে। রবীন্দ্র সরোবর,হাতিরঝিল ঘুরে বেড়িয়েছে তিন রত্ন।দিনগুলো তো ফিরে আসবে না।রনি ছাপার অযোগ্য একটা গাল বকে সিগারেট ধরালো।
.
নির্জন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে রুদ্র-রনির মাঝে বসে পড়লো।
রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,
-কি হইসে রে বাপ?
-আর কাকু! চৌদ্দ তলায় উঠছিলাম।
-ক্যান?
-বাসা দেখার জন্য।
-দেখছস?
-হু।
-পছন্দ হইসে?
-না
কেউ কোনো কথা বলছে না। চুপচাপ বড্ড। সংসদ ভবনের সামনে বসে আছে। আজ কেউ ফোন চাপছে না। সন্ধ্যে নামি নামি করছে। গল্পেরা মাঝে মাঝে খুব অসহায় হয়ে পড়ে। শুরু হয়ে কখনো শেষ হয় না।কখনো ঝুপ করে শেষ হয়ে যায় বোঝা যায় না।এই বন্ধুত্ব, টুকরো টুকরো গল্পেরা বেঁচে থাকুক ভালবাসায়। রুদ্র সিগারেট চুপচাপ রনির হাতে দিল।রনি নির্জনকে।ধোঁয়া গুলো পাক খেয়ে উঠে মিশে যায় শূণ্যে।।
Esrat Jahan Onindita
কোন মন্তব্য নেই