সততার আহ্বান
সততার আহ্বান
.
সততা মানুষকে মহৎ করে তোলে। সততা মানুষের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করে। সততা মানুষকে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছিয়ে দেয়। যে সততাকে অাকঁড়ে ধরেছে সে জীবনের প্রতিটি রণক্ষেত্রে বিজয় লাভ করেছে
.
সততার সংজ্ঞা বিভিন্ন ভাবে দেয়া যায়। মানব চরিত্রে কিছু সদগুণের সামষ্টিক রূপই হলো সততা। মানুষের সৎ কথা, সৎ ভাবনা, সৎ কর্ম প্রবাহ-রূপ, কল্যাণকর ভাবই সততা। সত্যনিষ্ঠা, অাত্মসংযম, শ্রদ্ধা, বিনীত ভাব, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি প্রকৃষ্ট গূণের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় সততা। সত্যনিষ্ঠ ও সৎ ধ্যান ধারণা যখন একজন মানুষের মাঝে প্রতিফলিত তখন সেই সদাচরণের নাম হলো সততা। সত্যবাদী, বিনয়ী, উদার, জ্ঞানবান, ন্যায়বান ও স্বাধীন মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরাই সততার অধিকারী।
যে সততাকে অাপন করে নিয়েছে, সকলের মাঝে সে বিশ্বস্ত হয়ে থাকে। যে সততা অবলম্বন করেছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে অানন্দ অনুভব করে। সততার দ্বারা অর্জিত সাফল্য মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী করে। শত বাধা- বিপত্তি,দুঃখ কষ্ট অার দারিদ্র্যতার ভেতরেও যারা নিজেদের চরিত্রকে সৎ ও সুন্দর রাখে, তারাই জীবনে খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করে। অবশ্য অনেক সময় এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। অসৎ ও মিথ্যার অাশ্রয় নিয়ে অনেকে পার্থিব উন্নতি সাধন সক্ষম হয়। কিন্তু এই ধরণের উন্নতির স্থায়িত্ব কখনো টিকে থাকে না। তাছাড়া যে অসৎ পন্থার পথিক হয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, কেউ তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখে না।
.
মানব জীবনে সততার চেয়ে বড় অলঙ্কার অার কিছু হতে পারে না। যে সততার মাধ্যেমে স্বীয় জীবনকে সাজাতে পেরেছে সে সকলের প্রিয়পাত্র হিসেবে শ্রদ্ধার উপটৌকন পেয়েছে। মানুষ জ্ঞানী ও ধনী হলেই পূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভ করতে পারে না। সততার বলে বলীয়ান ব্যক্তিই পূর্ণ মনুষ্যত্বের অধিকারী হয়। সততা মানব চরিত্রের মুকুটস্বরূপ। এ গুণ দ্বারাই মনুষ্যত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সততা সাধনার ধন। পৃথিবীর জ্ঞানী ব্যক্তিরা সততাকে মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে অভিহিত করেছেন। যার মাঝে সততার এই মহৎ গুণটি বিদ্যমান, সে সম্পদে দীন হলেও গৌরবে মহান।
.
এই পার্থিব সংসার প্রলোভনময়। পাপের হাজারো প্রলোভন মানুষকে ভ্রষ্টপথে চালিত করতে সদা সচেষ্ট। স্বীয় অাত্মিক শক্তি বলে সেসব প্রলোভনকে দমন করে অাপনাকে সততার পথে অবিচল রাখতে হয়। এজন্যে সর্বাগ্রে প্রয়োজন অাপন শক্তিতে দৃঢ় অাস্থা স্থাপন। যে দুর্বল, বলহীন, নিজেকে ক্ষুদ্র মনে করে, সংসারের যাবতীয় প্রলোভন জয় করার মতো মনোবল যার কাছে অনুপস্থিত, সে কখনো সততারূপ অমূল্য ধনের অধিকারী হতে পারে না। অার মানুষের অন্তরে সেই সত্যকে অবলম্বন করার উৎসাহ ও উদ্দীপনার বীজ বপন করেছে ইসলাম।
অাল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেম : হে ঈমানদারগণ! অাল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথী হয়ে যাও ( তাওবা: ১১৯)। অায়াতটিতে অাল্লাহ তায়ালা সততার মহান ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করেছেন। হজরত অাব্দুল্লাহ ইবনে অাব্বাস ( রা:) এই অায়াতের তাাফসীরে বলেন, " ঔসব লোক, যাদের নিয়তসমূহ অটল থাকে, অন্তর ও অামলসমূহ সর- সঠিক এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে"।
.
মহান নবী, সৃষ্টিকুলের অাদর্শ, রহমতের কান্ডারী, সারওয়ারে কায়েনাত, অাহমদ মোজতাবা, মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : সত্য মুক্তি দেয় অার মিথ্যা ধ্বংস করে।
.
এই পৃথিবীতে সৎ- অসৎ, ভালো- মন্দ, সত্য - মিথ্যা পাশাপাশি বিরাজমান। এই পার্থিব জগতে সৎ এবং সত্য পথের পথিক যেভাবে রয়েছে, তেমনি অসৎ এবং মিথ্যা পথের যাত্রীও বিদ্যমান। কিন্তু ইসলাম মানবজাতিকে শিক্ষা দেয় যে, সত্যাবলম্বনই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। ইসলাম সর্বদা মানুষকে সত্য ও সততার দিকে অাহ্বান করে। মানুষ যখন বিনয়ী,সত্যনিষ্ঠ, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী হয় তখন সে সৎ।
যে সততাকে উপলদ্ধি করেছে এবং তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেছে সে যেন ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা খোজে পেল। সবাইকে সততার গুণে গুণান্বিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। সততার এই গুণ গ্রহণে অর্থ ব্যয়ের অাশংকা থাকে না। বরং প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল, সৎ শিক্ষা ও সৎ চিন্তাধারা।
ফাহাদ আজাদ
কোন মন্তব্য নেই