তারা দুই ভাই


তারা দুই ভাই


টয়লেটের তীব্র চাপ অনুভব করার সাথে সাথে রইস বিবাহের মন্ঞ্চ ছেড়ে টয়লেটের দিকে দৌড় দিল।তার ভাই সবুর পেছন থেকে চিৎকার করে বলতে লাগল..
:
ওই রইস,বিয়া ফালাইয়া কই দৌড় দেস তুই? কাজী সাব এহনি আইয়া পরব।তাড়াতাড়ি এদিক আয়।
:ভাইয়া ডাইকো নাতো।বেজায় চাপে আছি।টয়লেটের দিকে যাইতেছি।
:ওই তোর পায়খানায় যাওয়া বন্ধ,তুই আগে বিয়া করবি তারপর পায়খানায় যাবি।একবার পায়খানায় ঢুকলে তুই তিন ঘন্টার আগে বাইরাইবিনা।এতক্ষন কাজী কি তোর লইগ্গা বইয়া থাকবো?ফিরা আয় কইলাম...
:ভাইয়া এখন আর ফিরা আসা যাইবো না।আসলে কিন্তু কাপড় নষ্ট হইবো সবার সামনে।আসমু?
:না থাক।তুই কাম সাইরাই আয়।কাপড় নষ্টের দরকার নাই।আমি বাথরুমের সামনে খাড়াইলাম।দেরি করলেই জোরে জোরে চিৎকার কইরা তোর নাম ধইরা ডাক দিয়া কমু,"ওই রইস্সা বাইরা বদ,দুই কেজি ইসুবগুলের ভুসি খাইয়া তারপর যা.."
ভায়ের পুরো কথা শোনার এখন টাইম নাই।শুনতে গেলে কাপড় নষ্ট।তাই দেরি না করে রইস টয়লেটের দরজা বন্ধ করল।কিন্তু একি!পায়জামার ফিতায় এমন গিট্টু লাগছে কেমনে?মনে মনে ভাইরে কতক্ষন গালি দিল ফিতাওয়ালা পায়জামা কেনার জন্য।দুই পা চাপ দিয়ে বেগের গতিরোধ করতে রইস আপ্রান চেষ্টা চালাতে লাগল।পাঁচ মিনিট চলে গেল রইসের বেড়ুবার নাম নেই তাই সবুর দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল,
:ওই রইস বাইরা।কাজী আইয়া পরছে।বাকিডা বাসায় গিয়া সারিস।তাড়াতাড়ি বাইর হ।
আরো দশ মিনিট পর...
:কি রে রইস বাইরাছনা কেন?ওই তুই না কইছিলি ছোডডা করবি?ওই বদ বাইরা কইলাম।সবাই জামাই খোঁজাখুজি করতাছে।কি লজ্জা!কি লজ্জা!
রইস চোরের মত বাধরুমের দরজাটা একটু খুলে উঁকি দিল।দেখলো আশেপাশে তার ভাই ছাড়া তেমন কেউ নাই।মৃদ্যু স্বরে ডাকলো,
:ভাইয়া,এই ভাইয়া,একটু বাথরুমে আসবি প্লিজ।
:ওই আমি বাথরুমে যামু কেন?তুই আয়।
:প্লিজ আয় না ভাইয়া।আমি আর সহ্য করতে পারতেছি না।
মুহুর্তে সবুরের মুখটা কালো হয়ে গেল দুশ্চিন্তায়।রইসের কি তাহলে কোষ্টকাঠিন্য কেটে গিয়ে তরলের রূপ নিল?বেচারা কত কষ্ট পাইতেছে।সবুর এক মিনিটো আর অপেক্ষা না করে ভাইয়ের বাথরুমে ঢুকল।
:ভাইয়া পায়জামার গিট্টু খুলতেছে না।এদিকে জামাকাপড় নষ্ট হবার অবস্থা হইছে।একটু হেল্প কর না প্লিজ।
:এই ব্যাপার!গাধা আরো আগে ডাকবি না?দেখি..
ছোট ভায়ের পায়জানার গিট্টু দাঁত দিয়ে টেনে টেনে খুলে দিল সবুর।ভায়ের এই কৃতিত্বে কৃতজ্ঞ হয়ে রইস হুর্রে বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।তার চিৎকারে বিয়ে বাড়ির কিছু মেহমান জড়ো হয়ে দরজায় নক করতে যাবে ঠিক তখনি সবুর মিয়া বাহিরে আসল আর রইস ঠাস করে দরজা বন্ধ করল।
:কি ব্যাপার সবুর সাহেব,আপনি জামাইয়ের সাথে বাথরুমে কি করেন?
:
আর বইলেন না,ভাইয়ের মাথাটা গরম হয়ে গেছে তাই পানি দিয়ে আসলাম।
আধা ঘন্টা পর...
পাত্রীর চাচার মাতব্বরিতে বিয়ে প্রায় ভাঙে ভাঙে অবস্থা।কাজী তিনবার কবুল বলাতে গিয়ে তিনবার- ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন মেয়ের কাছ থেকে।সমস্যাটা কাবিনের টাকা নিয়ে। ছেলে পক্ষের কথা ছিল তিনলক্ষ এক টাকা,মেয়ের পরিবারেরও এতে আপত্তি ছিল না কিন্তু তার চাচা বিয়েতে এসে বাধালেন ঝামেলা।তিনলক্ষ টাকা তার কাছে খুবই কম।তিনি দাবী করছেন পাঁচলক্ষ।সবুর অনেক বোঝালেন তাকে কিন্তু কাজ হল না।
:পাঁচলক্ষ হলে বিয়ে হবে নাইলে হবে না।আমার এক কথা।
:
কিন্তু চাচা আমার ভাই তো নগদ তিনলক্ষ টাকা নিয়ে আসছে আর চার ভরি গহনা।তার ইচ্ছা সে তার বউকে নগদ অর্থে দেনমোহর প্রদান করবে গহনা ছাড়া। তারে বুঝাইলাম গহনাওতো দেনমোহরের আওতায় পরে।সে বলল,গহনাগুলো তো মা আর তোর দেয়া সেটা না হয় বাদ থাক।"এই মূহুর্তে সে দুইলক্ষ টাকা কোথায় পাবে?
:
ওত কিছু জানি না মিয়া।তাইলে উশুল তিন লেখে বাকি দুই দেখান।
রইস এবং সবুর দু জনেই চিন্তায় পরে গেল।কি করা যায় এখন?সবুর চুপ করে কাজী সাহেবকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে কি যেন বলল।কিছুক্ষন পর চাচার কথামত বিয়ে সম্পন্ন হল।
:মৃত আকবর মিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র রইস মিয়ার সাথে শুক্কুর আলীর একমাত্র কন্যা রাইসা আক্তারের বিবাহ নগদ পাঁচ লক্ষ টাকায় ধার্য করা হল,আপনি বলুন কবুল...
কন্যা কাজীর কথা শেষ হবার আগেই তিন কবুল বলে ফেলল।নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা কম না।দেরি করে লাভ কি তাই ঝটপট কবুল।কিন্তু রইসের মুখ থেকে আর কবুল বাহির হয় না।হায় হায় রে!বাকি দুই লাখ টাকা সে কই পায়?বিয়ার প্রথম রাতেই তো বউরের কাছে চরম লজ্জা পাইতে হবে।তার পকেটে তিনলাখ দিতে হবে পাঁচ?কেমনে কি?রইস কাঁদতে লাগল।দুচোখের পানিতে তার পান্জাবী যখন আষাঢ় মাসের হঠাৎ বৃষ্টির ন্যায় ভিজে একাকার তখন পেছন থেকে ভাবি গুতা দিয়ে বলে,এই ছেলে কান্না থামিয়ে কবুল বল তো।ভাবির পিরাপিরিতে রইস তিন কবুল বলে বিয়ে শেষ করল।
বউ নিয়ে বাসায় আসার পর মা কে সালাম করার পর ভাই,ভাবিকেও সালাম করল রইস তার বউ।ভাই সবুর তাকে জড়িয়ে ধরে পকেটে কিযেন দিলেন।কানে কানে বললেন,বউয়ের কাছে আর লজ্জা পেতে হবে নারে গাধা।তোর ভাবির জমানো টাকা ছিল দুলাখ দিয়ে দিয়েছে তোকে।পরে সুযোগ বুঝে ফেরত দিস।যা এখন..
রইস কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাই,ভাবির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।ওই মুখ দুটো তার কাছে পিতামাতার মত মনে হল।সে আবার কেঁদে দিল।সবুর ধাক্কা য়ে তাকে বাসর ঘরে ঢোকালো।
রাত দুটো....
:ভাইয়া ভাইয়া দরজা খোল...
রইস সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল।ভায়ের এত রাতে দরজায় নক করা দেখে দ্রুত দরজা খুলে দিল।
:কি রে কি হইছে?শরীর ঠিক আছে তো?
:
ভাইয়া,পায়জামার গিট্টুটা একটু খুলে দে না..প্লিজ
:!!!!!
দেনমোহরের টাকা সম্পূর্ন পরিশোধ করুন


অনামিকা আহমেদ


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.