সুস্থ মানসিকতার সোশ্যাল মিডিয়া চাই


সুস্থ মানসিকতার সোশ্যাল মিডিয়া চাই

.
খুব সিরিয়াস ব্যাপারে পোস্ট দিলাম। গুরুত্বপূর্ণ টপিক। পাবলিকের পছন্দ হয়েছে। প্রচ্চুর আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ নোটিফিকেশন আসলো, আসিফ রিএক্টেড।
কি রিএক্ট?
হা হা।
মেজাজটা চরম খারাপ। মানেটা কি? মানে, মানেটা কি?
এই পোস্টে হা হা?
ব্যবস্থা নেয়া লাগবে।
.
অয়ন প্রোফাইল পিকচার আপ করেছে। ছেলে প্রোফাইল পিকচারে প্রচ্চুর হা হা পায়৷ এই প্রথম হা হা ব্যতীত ছবি পেয়ে বন্ধু আমার খুশি৷ কিন্তু চাঁদের কলঙ্কের মতো ওর প্রোপিকে হা হা পড়লো।
আসিফ রি এক্ট দিয়েছে।
অয়নের মেজাজ পুরো গরম। যাকে বলে হট, স্পাইসি হট।
আসিফ, তুমি তো শেষ।
.
আদনান কলেজ নিয়ে আবেগ মার্কা পোস্ট দিয়েছে। ছেলের বানান ভুল কাটিয়ে আমরা সেখানে স্মৃতি চারণ করছি৷
এর মাঝে, হঠাৎ এলওএল কমেন্ট পড়লো। একটা হা হা!
সবার মেজাজ খারাপ। এইটা কে?
সেই কুলাঙ্গার আসিফ।
আদনান, আমাদের, সবার মেজাজ খারাপ৷
মানে, কি এইটা? হা হা কেন?
.
সিক্রেট গ্রুপে চ্যাটিং হচ্ছে৷ ইটস হাই টাইম৷ ব্যবস্থা নিতে হবে। এতো হা হা মেনে নেয়া যায় না৷
প্ল্যান ফাইনাল, কিডন্যাপ করা হবে আসিফ কে৷ তারপর বাকিটা৷
প্ল্যান এবং প্ল্যান বি বানালাম। একটা বানচাল হলে আরেকটা৷ না, প্ল্যান বি মাহি বি চৌধুরির প্ল্যান বি এর মতো না৷ এইটা বেশি জোশ লাগলো, এটাকে তাই প্ল্যান বানালাম।
.
আসিফ কে কিডন্যাপ করার প্ল্যান বানানোর পর গ্রুপ থেকে বেরিয়ে একটা 'লিসেনিং টু' পোস্ট দিলাম। ব্রায়ান এডামসের, সামার অফ সিক্সটি নাইন৷ নস্টালজিক ফ্লেভার আছে৷
সেই পোস্টে হা হা৷ মেজাজ খারাপ হলো।
জানি কে দিয়েছে। তাও চেক করলাম।
না, এইটা আসিফ না। 'রূপকথার নীলপরী'
চুল। পিউবিক হেয়ার৷ মুখ দিয়ে বেরোলো।
এর মানে টা কি!
মেনশন দিলাম কমেন্টে, হা হা কেন?
মাইরি, সেই কমেন্টেও হা হা!
না, এটা কে বের করা লাগবে।
.
রাতে মাইডে দেখছি। একের পর এক ছবি যাচ্ছে।
হঠাৎ সেই পরী না জ্বিন, তার আইডি আসলো। বিড়ালের ফিল্টার ইউজ করা। চেনা চেনা লাগলো। অনেকগুলো ছবি।
হায় আল্লাহ! সবগুলোতে বিড়ালের ফিল্টার৷ কি!
এই মেয়ে কি বিড়াল ফ্রিক? নিজেকে বিড়াল ভাবতে পছন্দ করে?
.
ঘুম ভেঙে গেল৷
ঘামছি রীতিমতো৷
সেই মেয়ে এসেছিল স্বপ্নে৷ আসলেই জ্বীন পরী! সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার মেয়েটা মিউ মিউ করছে। চার পায়ে হাটছে।
আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি পিছিয়ে যাচ্ছি।
সে মিউ মিউ করে৷ আমি পেছাই৷
আসিফ চলে এসেছে।
হাসছে। দাঁত ক্যালাচ্ছে।
হা হা।
অপ্রকৃতস্থের হাসি।
এরপর ঘুম ভেঙে গেল৷
নাহ! সকালে এই ব্যাপারে আলোচনা করা লাগবে।
.
সবাইকে বললাম এই ব্যাপারে।
আইডিয়া এসেছে।
আগে আসিফ কে সাইজ করি।
তারপর বাকিটা।
.
আসিফ কে ধরে আনা হয়েছে।
প্রথমে ভেবেছিল কে না কে। কিন্তু আমাদের দেখে স্বস্তি পেল।
কিন্তু রিশাদের হাতে ইঞ্জেকশন দেখে ভড়কে গেল।
এতো দিন হেসেছে, সিরিয়াস মোমেন্টে হেসেছে। আজ আমরা হাসছি।
ইঞ্জেকশন পুশ করলাম।
সে একটু চিৎকার দিল।
আমি ঝাড়ি দিলাম, চুপ!
আসিফ ভাবলো হয়তো অজ্ঞান হয়ে যাবে।
যখন দেখলো, ইঞ্জেকশন এর পর ওকে ছেড়ে দিচ্ছি, ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি করলি ভাই তোরা ইঞ্জেকশন কি ছিল?
আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, ভ্যাক্সিন।
কিসের ভ্যাক্সিন? আসিফের গলায় ভয়।
পোস্টে সঠিক রিএক্ট কমেন্ট করার ভ্যাক্সিন।
১০.
এরপর আমরা ভাবলাম। কজন কে আমরা এভাবে ধরে ধরে ভ্যাক্সিন দেব?
নাহ! যারা এই রোগে ভুগছে তারা ভুগছে। তাদের কিছু করার নেই৷ পরিচিতদের কিছু করতে পারলেও অপরিচিতদের কি করবো?
তাই আমরা একটা ফ্রি প্রজেক্ট পরিকল্পনা করলাম।
আমরা টিকা দেব৷ যারাই নতুন পুরাতন আছে ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাদের টিকা দেব৷
প্যাকেজ টিকা। সঠিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া চালানোর টিকা।
এই প্যাকেজে আছেঃ
*
সঠিক রিএক্ট দেয়া
*
কমেন্ট করা
*
বাংলিশে পোস্ট না লেখা
*
সবসময় উদ্ভট ফিল্টার ইউজ করে সেলফি না তোলা
*
সেলফি তোলা কমানো
*
মানুষের অস্বস্তিকর মুহূর্ত বা ভয়ংকর কিছু সোশ্যাল সাইটে পোস্ট না করা
*
মানুষ কে ইনবক্সে আজেবাজে কন্টেন্ট না দেয়া, কাউকে উত্যক্ত না করা।
*
নিজের পোস্টে নিজে রিএক্ট না দেয়া
আমরা WHO তে এপ্লাই করেছিলাম, তারা এটাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছে৷ তারা আমাদের সাহায্য করবে।
অচিরেই এই টিকা প্রদান শুরু হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া টিকা নিন
আপনার সন্তান আত্মীয় স্বজন কে এই টিকা দিন
সোশ্যাল মিডিয়ার সুস্থ ব্যবহার করুন৷



ফুয়াদ


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.