যাপিত জীবন
যাপিত জীবন
"এত গরমের মধ্যে গরম পানি গলায় ঢালো কোন আক্কেলে!"
কথাটা শুনে ফিক করে হেসে ফেললাম।
কামাল আসলেই ভালো মানুষ। আমার ভালোমন্দের খোঁজখবর এখনো রাখে।
চৈত্রের তীব্রদাহে আমি চা খাচ্ছি দেখে ওর এই উষ্মা প্রকাশ।
সারাদিন রাত হাত পা জ্বলে,চোখ জ্বলে তবু চা খাওয়ার অভ্যাস আমি ছাড়তে পারি না।
পঞ্চাশেরএই নিভন্ত সময়ে কতকিছু যে জীবনে যোগ বিয়োগ হলো কিন্তু চা খাওয়ার স্বভাবটা এখনো আছে অনড় অবিচল।
চোখে চশমাটা ঠেলতে ঠেলতে বললাম, "এত বছরেও তুমি যেমন সিগারেট খাওয়ার কুঅভ্যাসটা ছাড়তে পারো নি,আমিও তেমন।"
কথাটা শুনে ফিক করে হেসে ফেললাম।
কামাল আসলেই ভালো মানুষ। আমার ভালোমন্দের খোঁজখবর এখনো রাখে।
চৈত্রের তীব্রদাহে আমি চা খাচ্ছি দেখে ওর এই উষ্মা প্রকাশ।
সারাদিন রাত হাত পা জ্বলে,চোখ জ্বলে তবু চা খাওয়ার অভ্যাস আমি ছাড়তে পারি না।
পঞ্চাশেরএই নিভন্ত সময়ে কতকিছু যে জীবনে যোগ বিয়োগ হলো কিন্তু চা খাওয়ার স্বভাবটা এখনো আছে অনড় অবিচল।
চোখে চশমাটা ঠেলতে ঠেলতে বললাম, "এত বছরেও তুমি যেমন সিগারেট খাওয়ার কুঅভ্যাসটা ছাড়তে পারো নি,আমিও তেমন।"
"তর্ক করার স্বভাব তোমার এই জীবনে যাবে না।"বিরক্তমুখে কামাল উত্তর দিলো।
"তাহলে বলো কেন এমন কথা!জানোই তো ঢেকি স্বর্গে গেলেও বাড়া বাঁধে!"
স্বগতোক্তির মতো বিড়বিড় করেই এই কথাটা বলে ফেললাম।
"শোন ডাক্তার কাছে কখন যাবে?আমি আবার কখন আসব!"
"তোমার আসতে হবে না,আমি যেতে পারব"
"সে তো পারবেই,একি আমার চেয়ে আর কেউ ভালো জানে!
এখন বলো, কখন যাচ্ছো তুমি?
আমি আসব।"
"বললাম তো আসতে হবে না।"
"সেই তোমার এক তেজ।আমি তোমাকে একা যেতে দেব না"
শেষের কথাগুলো বেশ দৃঢ়তার সাথেই কামাল বলল।
"শোন ডাক্তার কাছে কখন যাবে?আমি আবার কখন আসব!"
"তোমার আসতে হবে না,আমি যেতে পারব"
"সে তো পারবেই,একি আমার চেয়ে আর কেউ ভালো জানে!
এখন বলো, কখন যাচ্ছো তুমি?
আমি আসব।"
"বললাম তো আসতে হবে না।"
"সেই তোমার এক তেজ।আমি তোমাকে একা যেতে দেব না"
শেষের কথাগুলো বেশ দৃঢ়তার সাথেই কামাল বলল।
আমি শুনেও না শোনার ভান ধরলাম।
আবারও স্বগতোক্তির মতোই যেন নিজেকে শুনিয়েই বললাম,"তিরিশ বছর ধরেই একা চলছি।তুমি তো কবেই নিজের পথ বেছে নিয়েছো।
মেয়েটাকেও বানিয়েছো নিজের মতো স্বার্থপর।
এখন সে নিজের মনের বাইরে যায় না,নিজের মতো করে ভালো থাকে,নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসেও না।
আমার উপর শুধু দায়িত্ব পালন করে,সেটাতে ভালোবাসা আছে কিনা বুঝি না।"
আবারও স্বগতোক্তির মতোই যেন নিজেকে শুনিয়েই বললাম,"তিরিশ বছর ধরেই একা চলছি।তুমি তো কবেই নিজের পথ বেছে নিয়েছো।
মেয়েটাকেও বানিয়েছো নিজের মতো স্বার্থপর।
এখন সে নিজের মনের বাইরে যায় না,নিজের মতো করে ভালো থাকে,নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসেও না।
আমার উপর শুধু দায়িত্ব পালন করে,সেটাতে ভালোবাসা আছে কিনা বুঝি না।"
"সন্ধ্যায় আসব, তৈরি থেকো" বলেই কামাল পেছন থেকে দরজা টেনে চলে গেলো।
দেবদাস নিয়ে নাড়াচাড়া করছি,মন বসছে না।হয়তো অনেকবার পড়েছি বলে আর পড়তে মন চাইছে না অথবা মনের আকাশ আজ ভালো নেই।
মেঘলা মনে বই পড়তে ভালো লাগে না।আমার অন্তত লাগে না।
কুন্তিকে একটা ফোন দেব?
বুঝতে পারছি না এখন ফোন দিলে রেগে যাবে কিনা।
ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের জন্য ওর আলাদা কোন মায়া নেই।
এমন আবেগহীন কেন যে হলো আমার মেয়েটা!
আমিও কি এমন আবেগবর্জিত ছিলাম?
কি জানি!
সারাজীবন তো দায়িত্ব পালন করেই গেছি।বুড়ো বয়সে বাপ মা দুজনকেই টেনেছি।জানা মতে কোন কষ্ট দেই নি।
ঐ একটা কষ্ট ছাড়া।
কিন্তু ঐটি আমার নিয়তি ছিল।
মেঘলা মনে বই পড়তে ভালো লাগে না।আমার অন্তত লাগে না।
কুন্তিকে একটা ফোন দেব?
বুঝতে পারছি না এখন ফোন দিলে রেগে যাবে কিনা।
ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের জন্য ওর আলাদা কোন মায়া নেই।
এমন আবেগহীন কেন যে হলো আমার মেয়েটা!
আমিও কি এমন আবেগবর্জিত ছিলাম?
কি জানি!
সারাজীবন তো দায়িত্ব পালন করেই গেছি।বুড়ো বয়সে বাপ মা দুজনকেই টেনেছি।জানা মতে কোন কষ্ট দেই নি।
ঐ একটা কষ্ট ছাড়া।
কিন্তু ঐটি আমার নিয়তি ছিল।
১৯৭১ সাল।তেরো বছরের কিশোরী আমি।বড় ভাইয়া মুক্তিবাহিনীতে নাম লিখিয়েছে।
আব্বার নিষেধ সে শোনেনি।
আমাকে, বড় আপাকে বাঁচাতে আব্বা ক্যাম্পে গিয়ে বদর বাহিনীতে নাম লিখিয়েছে শুনেছি।
আমার আব্বা অন্য ধাচের মানুষ। নিজের করণীয় নিজে করতে পছন্দ করেন।
পরিবারের কারোর উপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেন না।
আম্মা মুক্তিবাহিনীর পক্ষে।আব্বাও মুক্তিবাহিনীর বিপক্ষে না।
কিন্তু উনার বিচারে মনে হয়েছে তিনি রাজাকার বা বদরী হলে নিজের মেয়েদের ইজ্জত রক্ষা করতে পারবেন।
নিজের মেয়েদের ভালো রাখার ব্যাপারে আপোষহীন তিনি।এর চেয়ে বড় আদর্শ তার কাছে কিছু নেই।
আব্বার নিষেধ সে শোনেনি।
আমাকে, বড় আপাকে বাঁচাতে আব্বা ক্যাম্পে গিয়ে বদর বাহিনীতে নাম লিখিয়েছে শুনেছি।
আমার আব্বা অন্য ধাচের মানুষ। নিজের করণীয় নিজে করতে পছন্দ করেন।
পরিবারের কারোর উপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেন না।
আম্মা মুক্তিবাহিনীর পক্ষে।আব্বাও মুক্তিবাহিনীর বিপক্ষে না।
কিন্তু উনার বিচারে মনে হয়েছে তিনি রাজাকার বা বদরী হলে নিজের মেয়েদের ইজ্জত রক্ষা করতে পারবেন।
নিজের মেয়েদের ভালো রাখার ব্যাপারে আপোষহীন তিনি।এর চেয়ে বড় আদর্শ তার কাছে কিছু নেই।
আম্মা ভাইকে ভালোবাসেন।জানি না ভাইয়ের মায়ায় তিনি মুক্তিবাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলেন কিনা।
আপাত আমাদের পরিবারে কোন কোন্দল ছিল না।সুখী পরিবার ছিল।আব্বার পরমতসহিষ্ণুতার গুণটি হয়ত সুখী পরিবারের রহস্য ছিল।
কিন্তু ৭১ সালের মে মাসের দিকে আমাদের শান্ত সুখের নীড়ে সূক্ষ্ম আদর্শিক দ্বন্দ্ব শুরু হলো।
আব্বা বদর বাহিনীতে যোগ দিয়েছে শুনে ভাইয়া বাড়ি আসা বন্ধ করে দিলেন।
আব্বার আনা তেলনুনে আম্মা বদরী কুকর্মের গন্ধ খুঁজে পেতেন।আম্মার ধারণা আব্বার আনা প্রতিটা বাজারসদাই পাকিস্তানীদের সহায়তা করার বদৌলতে প্রাপ্য। উনি রান্না করা ছেড়ে দিলেন।ঘরে খেতেনও না।
আমরা দুবোন মিলে রান্না করতাম।
আব্বা বদর বাহিনীতে যোগ দিয়েছে শুনে ভাইয়া বাড়ি আসা বন্ধ করে দিলেন।
আব্বার আনা তেলনুনে আম্মা বদরী কুকর্মের গন্ধ খুঁজে পেতেন।আম্মার ধারণা আব্বার আনা প্রতিটা বাজারসদাই পাকিস্তানীদের সহায়তা করার বদৌলতে প্রাপ্য। উনি রান্না করা ছেড়ে দিলেন।ঘরে খেতেনও না।
আমরা দুবোন মিলে রান্না করতাম।
আম্মা পাষাণ সিদ্ধান্ত নিলেন।
আব্বাকে জানিয়ে দিলেন তিনি মুক্তিক্যাম্পে যাচ্ছেন।
আব্বা কোন বাধা দিলেন না।
আম্মা মুক্তিদের রান্নার কাজ নিলেন।
আব্বাকে জানিয়ে দিলেন তিনি মুক্তিক্যাম্পে যাচ্ছেন।
আব্বা কোন বাধা দিলেন না।
আম্মা মুক্তিদের রান্নার কাজ নিলেন।
সেপ্টেম্বর মাসের দিকে একদিন রাতের বেলা আব্বাকে পাকক্যাম্পে থাকতে হলো।
আমরা দুবোন ঘরে রইলাম।
রাত তিনটার দিকে আমাদের পাকি ক্যাম্পে তুলে নেয়া হলো।
আব্বা কিছুই জানতে পারলেন না।
বড় আপা অদ্ভুত শীতল স্বভাবের ছিলেন।তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিলো না তার ক্যাম্পে যেতে আপত্তি আছে কিনা।
শান্তভাবে তিনি গাড়ি চড়ে ক্যাম্পে গেলেন।
আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না।
আমিও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আপার পিছু পিছু গাড়ি চড়েই ক্যাম্পে গেলাম।
আমরা দুবোন ঘরে রইলাম।
রাত তিনটার দিকে আমাদের পাকি ক্যাম্পে তুলে নেয়া হলো।
আব্বা কিছুই জানতে পারলেন না।
বড় আপা অদ্ভুত শীতল স্বভাবের ছিলেন।তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিলো না তার ক্যাম্পে যেতে আপত্তি আছে কিনা।
শান্তভাবে তিনি গাড়ি চড়ে ক্যাম্পে গেলেন।
আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না।
আমিও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আপার পিছু পিছু গাড়ি চড়েই ক্যাম্পে গেলাম।
যেহেতু আমরা বদরীর মেয়ে তাই সিদ্ধান্ত হলো আপাকে বড় অফিসারের আজ রাতের বিছানা সঙ্গী হতে হবে কাল সকালে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া হবে।
আমাদের গনধর্ষণে দেয়া হবে না।
আমাকে এককক্ষে বসিয়ে চা বিস্কুট খেতে দেয়া হলো।
আমি টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমাদের গনধর্ষণে দেয়া হবে না।
আমাকে এককক্ষে বসিয়ে চা বিস্কুট খেতে দেয়া হলো।
আমি টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘণ্টাখানেক পরে চিৎকার শোরগোলে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
তিনচার জন জোয়ান আমাকে টেনে হেচড়ে একটা কক্ষে নিয়ে গেলো।
আমার সব কাপড় টেনে খুলে ফেলল।
চারজন আমার চারহাত পা টেনে ধরে রাখল।একজন ধর্ষণ করতে শুরু করল।
এভাবে সম্ভবত পাঁচজনই আমাকে ধর্ষণ করেছে।আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।সে রাতের কথা আর কিছু মনে নেই।
তিনচার জন জোয়ান আমাকে টেনে হেচড়ে একটা কক্ষে নিয়ে গেলো।
আমার সব কাপড় টেনে খুলে ফেলল।
চারজন আমার চারহাত পা টেনে ধরে রাখল।একজন ধর্ষণ করতে শুরু করল।
এভাবে সম্ভবত পাঁচজনই আমাকে ধর্ষণ করেছে।আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।সে রাতের কথা আর কিছু মনে নেই।
পরদিন জেনেছি আমার বোন ঐ অফিসারের অণ্ডকোষ কামড় দিয়ে কেটে ফেলেছে।
তাই আমাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে।আমার বোনকে সে রাতেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।
তাই আমাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে।আমার বোনকে সে রাতেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।
আমাকে আর বাড়ি ফিরে যেতে দেয়া হয় নি।
ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি পাকি ক্যাম্পে বন্দী ছিলাম।
ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি পাকি ক্যাম্পে বন্দী ছিলাম।
বিজয়ের পরে আমার ভাইয়ের বন্ধুরা ও আব্বা আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।
উদ্ধার না করলেও চলত কারণ আমি তখন অনুভূতি শূন্য ছিলাম।জীবন কাকে বলে সেটি আমার জানা ছিলো না।সময় কাটুক যেভাবেই হোক এই বোধটাই মনে গেঁথে গিয়েছিল।
উদ্ধার না করলেও চলত কারণ আমি তখন অনুভূতি শূন্য ছিলাম।জীবন কাকে বলে সেটি আমার জানা ছিলো না।সময় কাটুক যেভাবেই হোক এই বোধটাই মনে গেঁথে গিয়েছিল।
ভাইয়া শহীদ হয়েছেন।আম্মাও ঘরে ফিরেছেন।
আব্বার কোন বিকার নেই।একদম চুপ হয়ে গেছেন।তিনদিনেও কোন কথা বলতেন কিনা মনে পড়ে না।
পরের ক্ষেতে কামলা দিতেন।
শাকসবজি যাই আনতেন আম্মা নীরবে তাই রাঁধতেন।
আব্বা পাতিল থেকে নিঃশব্দে ভাত তুলে খেতেন, সময় মতো নামাজে যেতেন,কাজে যেতেন।
আব্বার কোন বিকার নেই।একদম চুপ হয়ে গেছেন।তিনদিনেও কোন কথা বলতেন কিনা মনে পড়ে না।
পরের ক্ষেতে কামলা দিতেন।
শাকসবজি যাই আনতেন আম্মা নীরবে তাই রাঁধতেন।
আব্বা পাতিল থেকে নিঃশব্দে ভাত তুলে খেতেন, সময় মতো নামাজে যেতেন,কাজে যেতেন।
শুধু আব্বা একটা জিনিস করতেন।দু একদিন পরপর আমার মাথায় নারকেল তেল ঘসে ঘসে দিয়ে দিতেন।বেনী বানাতে পারতেন না।আমারও বেনী করতে মন চাইত না,আমার আম্মাই তখন আমার বেনী করে দিতেন।
সংসারে আমরা কেউ কারো সাথে কথা বলতাম না।পারতপক্ষে না।
যুদ্ধ আমাদের কক্ষ বিচ্যুত করে দেয় নি তবে নীরব করে দিয়েছিল।
যুদ্ধের নয় মাস আমরা আদর্শিক দ্বন্দ্বে ছিলাম।যুদ্ধ শেষ আবার আমরা একই পরিবার।তবে সব আগের মতো ছিলো না।আব্বা আম্মা একটা সম্পর্কে থেকে শীতল অবস্থানে চলে গেছেন।যুদ্ধে আমাদের তিন ভাইবোনের মধ্যে দুজন শহীদ হয়েছেন,আমি জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে আছি।আব্বা মেয়েদের বাঁচাতে রাজাকার উপাধি স্বেচ্ছায় কাঁধে নিলেন তবু মেয়েদের রক্ষা করতে পারলেন না।আমার আম্মা হয়ে গেলেন শহীদ জননী।
সংসারে আমরা কেউ কারো সাথে কথা বলতাম না।পারতপক্ষে না।
যুদ্ধ আমাদের কক্ষ বিচ্যুত করে দেয় নি তবে নীরব করে দিয়েছিল।
যুদ্ধের নয় মাস আমরা আদর্শিক দ্বন্দ্বে ছিলাম।যুদ্ধ শেষ আবার আমরা একই পরিবার।তবে সব আগের মতো ছিলো না।আব্বা আম্মা একটা সম্পর্কে থেকে শীতল অবস্থানে চলে গেছেন।যুদ্ধে আমাদের তিন ভাইবোনের মধ্যে দুজন শহীদ হয়েছেন,আমি জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে আছি।আব্বা মেয়েদের বাঁচাতে রাজাকার উপাধি স্বেচ্ছায় কাঁধে নিলেন তবু মেয়েদের রক্ষা করতে পারলেন না।আমার আম্মা হয়ে গেলেন শহীদ জননী।
প্রায় তিনমাসের গণধর্ষণেও আমি গর্ভবতী হলাম না।সবাই আশ্চর্য হলো।
যুদ্ধের পাঁচবছর পরে আমার যখন আঠারো বছর আব্বা গ্রাম ছাড়লেন।
আম্মা বোধয় কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছিলেন।
আমরা সবাই দিনাজপুর থেকে রাজশাহী চলে এলাম।
পটল চেরা চোখ, দুধে আলতা গায়ের রঙ,সুঠাম স্বাস্থের জন্য আমার কামালের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো।
আব্বা এবারও আমার ভালোর জন্য শঠতা করলেন।
কামালদের কাউকেই জানালেন না যে আমি বীরাঙ্গনা।
ওহ্
বীরাঙ্গনা খাতায় তো আমার নাম নেই!
আসলে আব্বা আমার নাম বীরাঙ্গনা লিস্টে রাখতে দেন নি।
যুদ্ধের পাঁচবছর পরে আমার যখন আঠারো বছর আব্বা গ্রাম ছাড়লেন।
আম্মা বোধয় কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছিলেন।
আমরা সবাই দিনাজপুর থেকে রাজশাহী চলে এলাম।
পটল চেরা চোখ, দুধে আলতা গায়ের রঙ,সুঠাম স্বাস্থের জন্য আমার কামালের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো।
আব্বা এবারও আমার ভালোর জন্য শঠতা করলেন।
কামালদের কাউকেই জানালেন না যে আমি বীরাঙ্গনা।
ওহ্
বীরাঙ্গনা খাতায় তো আমার নাম নেই!
আসলে আব্বা আমার নাম বীরাঙ্গনা লিস্টে রাখতে দেন নি।
বেশ সুখের সংসার ছিলো আমার।আমি শুধু মাঝে মাঝে গুমোট হয়ে থাকতাম।
কামাল কারণটা ধরতে পারত না।
আব্বা গ্রামে ফিরলেন না।আমার শশুর বাড়ির পাশেই একটা কাজ ঠিক করে রয়ে গেলেন।
হয়ত আমার নিরাপত্তার জন্য।
কামাল কারণটা ধরতে পারত না।
আব্বা গ্রামে ফিরলেন না।আমার শশুর বাড়ির পাশেই একটা কাজ ঠিক করে রয়ে গেলেন।
হয়ত আমার নিরাপত্তার জন্য।
দু বছর পর আমার কোলে কুন্তি এলো।
কিভাবে কিভাবে যেন শশুরবাড়ির সবাই আমার ক্যাম্পে থাকা তিনমাসের কথা জেনে গেলো।আব্বাকে প্রচণ্ড অপমান করল।
আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো।
আমার বাচ্চাটাকেও আমার সাথে দিয়ে দিলো।ধর্ষিতার জঠরে জন্ম বলে ওদের কাছে কুন্তিও আবর্জনা হয়ে গেলো।
আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো।
আমার বাচ্চাটাকেও আমার সাথে দিয়ে দিলো।ধর্ষিতার জঠরে জন্ম বলে ওদের কাছে কুন্তিও আবর্জনা হয়ে গেলো।
কামাল প্রতিবাদ করল না।আমার পাশে এসে দাঁড়ালো না।
খুব দ্রুত কামালকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়া হলো।
তারপর অনেক বছর কামালের কোন খোঁজ পাই নি।
আব্বা সেই শহর ছাড়লেন।
আমরা ঢাকা চলে এলাম।
কুন্তি বড় হতে লাগল।
আব্বা কুলি মুটের কাজ নিলেন।
আমি আবার পড়া শুরু করলাম।
আমি কাজ খুঁজতে খুঁজতে পাগল হতে লাগলাম।
টিউশন বাড়ি পড়াতে গেলে ছাত্রের বাবার কুলালসার শিকার হই,ছাত্রের মা নষ্টা মেয়েমানুষ বলে গালি দিয়ে বেতন না দিয়েই তাড়িয়ে দেয়।
এগুলো প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।
আমি এবার ঘুরে দাঁড়াই।
যে সমাজে সততার মূল্য নেই,পরিস্থিতির সাথে সসম্মানে আপোস নেই সেই সমাজে বেঁচে থাকতে হলে যা আছে তা নিয়েই চলতে হবে।
খুব দ্রুত কামালকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়া হলো।
তারপর অনেক বছর কামালের কোন খোঁজ পাই নি।
আব্বা সেই শহর ছাড়লেন।
আমরা ঢাকা চলে এলাম।
কুন্তি বড় হতে লাগল।
আব্বা কুলি মুটের কাজ নিলেন।
আমি আবার পড়া শুরু করলাম।
আমি কাজ খুঁজতে খুঁজতে পাগল হতে লাগলাম।
টিউশন বাড়ি পড়াতে গেলে ছাত্রের বাবার কুলালসার শিকার হই,ছাত্রের মা নষ্টা মেয়েমানুষ বলে গালি দিয়ে বেতন না দিয়েই তাড়িয়ে দেয়।
এগুলো প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।
আমি এবার ঘুরে দাঁড়াই।
যে সমাজে সততার মূল্য নেই,পরিস্থিতির সাথে সসম্মানে আপোস নেই সেই সমাজে বেঁচে থাকতে হলে যা আছে তা নিয়েই চলতে হবে।
প্রস্টিটিউশনকে সেই আমলেই পেশা হিসেবে বেছে নিলাম।
আমাকে বাঁচতে হবে।কুন্তিকে বাঁচাতে হবে।
"রুপেরই যদি কদর করো তবে মাগনা করবা ক্যান"
এই মন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করলাম।
একটা চক্রের সাথে মিলে রাতের ব্যবসা করতাম,দিনে পড়তাম,কুন্তিকে পড়াতাম।
আমাকে বাঁচতে হবে।কুন্তিকে বাঁচাতে হবে।
"রুপেরই যদি কদর করো তবে মাগনা করবা ক্যান"
এই মন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করলাম।
একটা চক্রের সাথে মিলে রাতের ব্যবসা করতাম,দিনে পড়তাম,কুন্তিকে পড়াতাম।
আব্বা একসময় সব জানতে পারলেন।কষ্ট পেলেন কিন্তু কিছু বললেন না। আব্বা চেয়েছিলেন আমি আমার মতো করে ভালো থাকি,বেঁচে থাকি।
সেই থেকে আব্বা আবার নীরব হলেন কিন্তু আমার সাথেই রইলেন আমাকে ত্যাগ করলেন না।
সেই থেকে আব্বা আবার নীরব হলেন কিন্তু আমার সাথেই রইলেন আমাকে ত্যাগ করলেন না।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আব্বা আম্মা আমার সাথেই ছিলেন।
কামাল বিশ বছর পরে দেশে এসেছে।
আমেরিকায় বিয়ে করেছিল সেই ঘরও টেকে নি।
কামাল আমাকে খুঁজে বের করেছে। বিশ বছরে ওর খুব একটা পরিবর্তন হয় নি।
চুলে পাক ধরেছে।চোখে চশমা উঠেছে এই যা!
আমেরিকায় বিয়ে করেছিল সেই ঘরও টেকে নি।
কামাল আমাকে খুঁজে বের করেছে। বিশ বছরে ওর খুব একটা পরিবর্তন হয় নি।
চুলে পাক ধরেছে।চোখে চশমা উঠেছে এই যা!
কামাল সব জেনেছে।আমিই বলেছি আমার ফ্ল্যাট কেনার রহস্য। বিলাসী জীবনের অর্থবিত্তের উৎস কি!
কামাল আমার কাছে থাকতে চেয়েছে।
কামাল আমার কাছে থাকতে চেয়েছে।
বলেছিলো,"স্বামীর অধিকার ফিরিয়ে দাও"
বলেছিলাম,"বিশ বছরে গঙ্গা এখন অনেক প্রবাহিত, পারবে কি তাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে?"
বলেছিল,"তবে খদ্দর হয়েই থাকতে দাও"
বলেছিলাম,"ফেন দেখলে সব কুকুরই আসে,নেড়ি কুকুরের সাথে খাতির করে লাভ?"
বলেছিলো,"তবে বন্ধু হয়েই থাকি।"
উত্তর দিই নি। নীরব ছিলাম।পতিতার বন্ধু হয় না।পতিতাকে কেউ বন্ধু বানায় না,প্রয়োজন শেষে থুতুর মতো ফেলে দেয়।
সেই থেকে কামাল আসে।পতিতার বাড়ি পুরুষের আসতে বাধা নেই।
কামাল ঘণ্টার পর ঘণ্টা ড্রয়িংরুমে বসে থাকে।
একসময় আমারও মায়া হয়।এককাপ চা দেই।
কেমন আছো জানতে চাই।
কামাল ঘণ্টার পর ঘণ্টা ড্রয়িংরুমে বসে থাকে।
একসময় আমারও মায়া হয়।এককাপ চা দেই।
কেমন আছো জানতে চাই।
আস্তে আস্তে খদ্দর প্রবেশ বন্ধ করে দিই।কামালই আসে বন্ধু হয়ে,শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে।
কুন্তি জানে কামাল তার বাবা কিন্তু কোনদিনও কুন্তি কথা বলে না।
কামাল চেষ্টা করেছে, লাভ হয় নি।তাই এখন বাবা হওয়ার চেষ্টাও করে না।
কামাল চেষ্টা করেছে, লাভ হয় নি।তাই এখন বাবা হওয়ার চেষ্টাও করে না।
বলেছে,"কুন্তি তোমার সন্তান, তুমি ওকে গর্ভে, হৃদয়ে ধারণ করেছো।আমি তো ওকে ত্যাগ করেছিলাম।
ঠিকই তো,অসময়ে ফেলে গেছি এখন কেন সে আমাকে মানবে!"
ঠিকই তো,অসময়ে ফেলে গেছি এখন কেন সে আমাকে মানবে!"
কুন্তি বিয়েতে বিশ্বাস করে না।কোন চুক্তিতে বিশ্বাস করে না।
তবে ভালোবাসায় বিশ্বাস করে।
ওর এই জীবন দর্শন আমাদের জীবন থেকেই প্রাপ্ত।
ভালোবাসা মনের কোন কোণে জমা ছিল বলেই হয়ত কামাল আবার বন্ধুরুপে আমার জীবনে এসেছে।
তবে ভালোবাসায় বিশ্বাস করে।
ওর এই জীবন দর্শন আমাদের জীবন থেকেই প্রাপ্ত।
ভালোবাসা মনের কোন কোণে জমা ছিল বলেই হয়ত কামাল আবার বন্ধুরুপে আমার জীবনে এসেছে।
মুসকান
কোন মন্তব্য নেই