বাচ্চা মেয়েটি


বাচ্চা মেয়েটি
Image result for cute baby

গভীর রাতে কিছুর শব্দে আয়ানের ঘুম ভেঙে গেলো। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে টর্চ জ্বালালো। ফ্লোরে চোখ যেতেই দেখলো, একটা চার পাঁচ বছরের বাচ্চা শুয়ে আছে। বাচ্চাটার কাছে যেয়ে দেখলো, মৃত। ফ্লরে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। একদম তাজা রক্ত।চিৎকার করতে যেয়ে ও চিৎকার করতে পারলো না। বেশ ভয় পেয়ে গেলো। এত রাতে রুমে এই বাচ্চা মেয়েটা আসবে কোথা থেকে! রুমে তো শুধু সে নিজে একাই থাকে। ভয়ে হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। প্রচুর ঘাম ঝরছে শরীর থেকে। উঠে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো ধীরে ধীরে। একি! দরজা খোলা! রাতে তো দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমিয়েছিলো। দরজার ফাঁকা দিয়ে চারপাশে তাঁকিয়ে দেখলো কেউ নেই। ভিতর থেকে আবার দরজা লাগিয়ে দিলো। চারতালা এই বাড়ির তিনতালার একটা ফ্লাটে আয়ান একাই থাকে। চাকরিজীবী হওয়ার কারণে, এই ছোট্ট শহরের নীরব একটি এলাকার এই বাড়িতে থাকে। বাবা-মা, ছোট বোন গ্রামেই থাকে। তাদের অনেকবার বলেছিলো এখানে এসে থাকতে, কিন্তু তারা গ্রামের ভিটাবাড়ি ছেড়ে এখানে থাকতে নারাজ। আয়ান গ্রামের ছেলে হওয়াতে তার তেমন ভূতপ্রেত এর ভয় করে না। কিন্তু এই বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে তার শরীরের প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে গেলো। মোবাইলের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো, রাত চারটা আট বাজে। এই বাচ্চা মেয়েটির লাশ এখন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। পুলিশকে জানালে তো নিজেই অকারণে ফেঁসে যাবে। তাই কোনো কুল কিণারা না পেয়ে, তার খুব কাছের বন্ধু অমিতকে ফোন করলো। কিন্তু কপাল খারাপ তার ফোন বন্ধ। ফোনটা পাশে রেখে বাচ্চা মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো। কাছে যেয়ে মেয়েটাকে চিত করে শুইয়ে দিলো। তারপর যা দেখলো সেটা সে আশা করেনি। মেয়েটার বাম চোখটা নেই! কে বা কারা যেন চোখটা তুলে দিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে না, বেশিক্ষণ আগে মারা গিয়েছে। মেয়েটার পড়নে লাল টুকটুকে একটা জামা। ডান পায়ে লাল রঙের একটা জুতা। মাথার দুই পাশে দুইটা চুলের বেণী করা। একটা চোখে দেখা যাচ্ছে কাজল লেপটে আছে। হয়তো চোখের পানিতে লেপটে গেছে। মেয়েটি দেখতে বেশ মায়াবতী। ছোট্ট একটা ডানা কাটা লাল পরি। ভয়ের মাঝে আয়ানের ভিতর একটা অজানা মায়া কাজ করছে। এতো রাতে এখন কিছু করা সম্ভব নয়। যা করার আগামীকাল করতে হবে। একটা কাপড় এনে মেয়েটির চোখ বেঁধে দিলো। আলমারি খুলে বড় একটা চাদর নিলো। মেয়েটিকে চাদরে ভালো করে পেঁচিয়ে দিলো। আলমারির নিচের তাক থেকে সব জামাকাপড় সরিয়ে ফেলে, সেখানে মেয়েটিকে শুইয়ে রাখলো। আলমারিটা তালা মেরে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। একটা বালতিতে পানি এনে রুমটা পরিষ্কার করে ফেললো। হঠাৎ ফজরের আজান কানে ভেসে আসলো। একটুও ঘুমাতে পারেনি। ভোরবেলা নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে অনেক দেরিতে ঘুম ভাংলো। আজ অফিসে জরুরী একটা মিটিং আছে। সেখানে উপস্থিত থাকতেই হবে। কোনরকম ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না করেই চলে গেলো বাসা থেকে। বাসায় রান্নাবাড়া করার জন্য একটা কাজের বুয়া আছে। তাকে ফোন করে আজ আসতে নিষেধ করে দিলো। অফিসের মিটিং-এ কোনো কাজে তার মন বসছে না। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা, বাচ্চা মেয়েটিকে কী করবে। বাইরের কেউ যদি কোনোমতে একটু জানতে পারে, তাহলে তো তার সমস্যার কোনো শেষ থাকবে না। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখলো অমিত ফোন করেছে।
-- হ্যালো,,,
-- কিরে কোথায় তুই?
-- অফিসে। তোকে রাতে ফোন করেছিলাম, কিন্তু ফোন বন্ধ পেলাম।
-- রাত কয়টায়?
-- রাত চারটা হবে!
এত রাতের কথা শুনে অমিত বেশ চমকে গেলো। আয়ান তো ঘুম পাগল ছেলে। নিশ্চয় কোনো সমস্যা হয়েছে, তা না হলে এতো রাতে ফোন দেবার মানুষ সে না।
-- কী হয়েছে বলতো? এত রাতে কেন ফোন দিলি? কোনো সমস্যা?
আয়ান কিছু বলতে যেয়েও বললো না। কারণ দেয়ালেরও কান থাকে কিনা। তাই যা করার নিজের করতে হবে।
-- তেমন কিছু না। ঘুম আসছিলো না তাই ফোন করেছিলাম।
-- ঘুম আসবে কী করে। কত করে বললাম একটা বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আস। বউ ছাড়া ঘুম আসে নাকি! তুই তো চিরকুমার হয়ে থাকবি। এটাই তোর ইচ্ছা।
আয়ানের এখন মসকারা করার মনমানসিকতা নেই। সে এখন সমুদ্রের মাঝে একটা ছোট কাঠের টুকরায় ভাসছে। তার চারপাশে বিশাল বিশাল ঢেউ নিয়ে পানি বয়ে চলছে। এখান থেকে বেচে তাকে পাড়ে ফিরে আসতে হবে।
-- আচ্ছা বন্ধু পরে কথা হবে। এখন রাখছি। 
কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা রেখে দিলো। অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরলো। বাসায় আসার সময় বাহির থেকে রাতের খাবার কিনে নিয়ে আসলো। রাতে ঘুম ভালো না হবার কারণে, এবং সারাদিন চিন্তা করার কারণে তার শরীর বড্ড ক্লান্ত লাগছে। ওয়াশ রুমে যেয়ে, প্রায় আঁধা ঘন্টা ধরে গোসল করলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে খাবার নিয়ে বসলো। সকালে এবং দুপুরবেলা না খাওয়ার জন্য এখন অনেক ক্ষুদা লেগেছে। খাবার বেরে নিয়ে মাত্র এক লোকমা মুখে নিলো, আর তখনই গতকাল রাতের কথাটা খুব বিশ্রী ভাবে মনে পড়ে গেলো। সাথে সাথে বমি করে দিলো। খাবার রেখে উঠে চলে আসলো শোবার রুমে। যেয়ে সরাসরি আলমারিটার কাছে গেলো। একি আলমারি খোলা! দ্রুত আলমারির পাল্লাটা খুুলে ফেললো। বাচ্চা মেয়েটি ভিতরে নেই! শুধু রক্তমাখা চাদরটা পড়ে আছে। আয়ান দুই হাত দিয়ে নিজের মথাটা ধরে ফ্লরে বসে পড়লো। যাবার আগে প্রতিটা রুম লক করে দিয়েছিলো। এমনকি যখন বাসায় আসে তখন সে নিজে প্রতিটা রুমের লক খোলে। তাহলে মৃত বাচ্চা মেয়েটি কোথায়! রুমে তো কেউ আসার বিন্দু মাত্র উপায় নেই। তাহলে কি বাচ্চা মেয়েটি জীবিত ছিলো! না না এটা তো কখনো সম্ভব না! আর যদি তাই হবে, তাহলে বাহির থেকে আলমারিটা কে খুললো! আয়ানের মাথা কাজ করছে না। আলমারিটা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। অনেক বমি হচ্ছে তার। বমির সাথে খাণ্ডা খাণ্ডা রক্ত পড়তে খেয়াল করলো। তার সাথে এগুলো কী ঘটছে, কিছুই বুঝতে পারছে না। অবশ্য বাচ্চা মেয়েটিকে এসে না পাওয়াতে একটা উপকার হয়েছে। আর তা হলো, কোথাও লুকিয়ে রাখার ঝামেলাটা তার উপর থেকে সরে গেলো। বিছানায় যেয়ে ক্লান্তিকর শরীরটা এলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পরেই ঘুুমিয়ে গেলো। 
হঠাৎ একটা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। আয়ান লাফিয়ে উঠলো। সাথে সাথে উঠে বসলো। আজ রাতে রুমের লাইট অন রেখেই ঘুমিয়েছিলো। আবার ফ্লোরের দিকে তাঁকাতেই সেই একই ভাবে পড়ে থাকা বাচ্চা মেয়েটিকে দেখলো। এবার আর কোনো ভয় তার ভিতর কাজ করছে না। এখন শুধু বেশ অবাক হলো, সাথে সাথে জেদ উঠে গেলো তার। আলমারিটা খুলে সেই চাদরটা বের করে নিলো। এবং বাচ্চা মেয়েটিকে চাদরে পেঁচিয়ে নিলো। সোজা ছাদে চলে গেলো। এই আপদবিপদ তার রুমে আর রাখতে চায় না। ছাদে রাখলে কেউ টের পাবে না এটা কে রেখেছে। এত রাতে নিশ্চয় এখন কেউ জেগে নেই। ছাদের দক্ষিণ পাশের কিণারায় কিছু ফুলের টপ রাখা। সেখানে বিভিন্ন রকমের ফুল গাছ। একেক ফুলের একেক ঘ্রাণ। রাতে এমন ফুলের ঘ্রাণে নেশা ধরে যাবার মতো। ফুলের টপ গুলো সরিয়ে দিয়ে, বাচ্চা মেয়েটির লাশটা রেলিং ঘেষে রাখলো। পরে ফুলের টপ গুলো তার পাশে সাজিয়ে দিলো। তাতে বাচ্চা মেয়েটির লাশ সহজে কারোর চোখে পড়বে না। ফিরে আসার সময় হঠাৎ একটা ঠাণ্ডা বাতাস এসে আয়ানের শরীরে লাগে। তার শরীরের প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে গেলো। কিছু না ভেবে সোজা হাটা দিলো। ছাদ থেকে নামতে যাবে, ঠিক তখনই পিছন থেকে খুব কচি নরম কণ্ঠে কে যেন বললো, "বাবা আমাকে এই অন্ধকারে একা রেখে যাচ্ছো!"
আয়ান ধমকে দাঁড়িয়ে গেলো। "বাবা" শব্দটা তাকে বেশ অবাক হতে বাধ্য করলো। ধীরে ধীরে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়,,,,



 MD Imran Hossen Emon

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.